কমেছে স্থানীয় মুদ্রার দাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে জুলাই মাসের শেষ নাগাদ বৈধ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর জন মঙ্গুদওয়া জানান, ২৫ জুলাই থেকে স্থানীয় মুদ্রা, মার্কিন ডলার ও অন্য বিদেশি মুদ্রায় বিক্রি হবে ওই স্বর্ণমুদ্রা। সোনার আন্তর্জাতিক মূল্যের ভিত্তিতে ওই মুদ্রা বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।
মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের কবল থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে এ ধরনের পদক্ষেপ অন্য দেশকেও আগে নিতে দেখা গেছে। এবার সেই পথ অনুসরণ করল জিম্বাবুয়েও।
জিম্বাবুয়ের সেন্ট্রাল ব্যাংক জানিয়েছে, ভিক্টোরিয়া ফলসের নামাঙ্কিত ওই সোনার কয়েনকে ভেঙে নগদে রূপান্তর করা যাবে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূলধন হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল সুদের হার এই মাসে দ্বিগুনের বেশি বেড়ে ২০০ শতাংশে পৌঁছেছে। এর আগে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায় প্রায় ১৯০ শতাংশের বেশি। এই বছর মূল মুদ্রার বিপরীতে জিম্বাবুয়ের ডলারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
নতুন চালু হতে যাওয়া স্বর্ণ মুদ্রার প্রতিটিতে থাকবে এক টরি আউন্স ২২ ক্যারেট স্বর্ণ। রিজার্ভ ব্যাংক অব জিম্বাবুয়ের গভর্নর জন পি মাঙ্গুদিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২৫ জুলাই থেকে এসব মুদ্রা বাজারে ছাড়া হবে।
স্বর্ণ, রুপা এবং প্লাটিয়ামের মতো মূল্যবান ধাতু পরিমাপের একক হচ্ছে টরি আউন্স। মধ্য যুগ থেকে চলে আসা এক টরি আউন্সে ৩১.১০ গ্রামের সমান হয়।
গভর্নর জন পি মাঙ্গুদিয়া বলেন, ‘স্বর্ণের মুদ্রাগুলো স্থানীয় মুদ্রা এবং মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য বিদেশি মুদ্রায় স্বর্ণের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মূল্য এবং উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে নির্ধারিত মূল্যে জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হবে।’
ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রতিটি স্বর্ণ মুদ্রা শনাক্ত করা হবে একটি সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে। আর খুব সহজেই এটি নগদে পরিণত করা যাবে, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও তা করা যাবে।
এই মুদ্রাকে ডাকা হবে ‘মোসি-ওয়া-তুনিয়া গোল্ড কয়েন’ নামে। এর অর্থ ‘বজ্র তৈরিকারী ধোঁয়া’। জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়া সীমান্তে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া ফলস এর প্রতি ইঙ্গিত করে এমন নাম রাখা হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের কবল থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে এ ধরনের পদক্ষেপ অন্য দেশকেও আগে নিতে দেখা গেছে। এবার সেই পথ অনুসরণ করল জিম্বাবুয়েও।
এদিকে স্বর্ণমুদ্রা চালুর ঘোষণায় জিম্বাবুয়ের নাগরিকেরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী ইভান মুপাচিকা বলেন, ‘আমার নগদ অর্থ রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কয়েন ধরিয়ে দেবে, যাতে আমি আস্থা রাখতে পারি না।’
জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নাগরিকের আস্থা সংকট রয়েছে। কারণ, এর আগে আর্থিক কর্তৃপক্ষ বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়ে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি লেবাননের। এরপরই রয়েছে আফ্রিকার দুই দেশ জিম্বাবুয়ে ও সুদান।
২০১৯ সালে ডলার প্রচলনের এক দশক পরে পুরোনো মুদ্রা ফিরিয়ে এনেছিল জিম্বাবুয়ে। তবুও মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে পারেনি দেশটি। ফলে শ্রীলঙ্কার মতোই বিদেশি মুদ্রার সংকটের মুখে শোচনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি গত মাসে দ্বিগুণেরও বেশি ১৯১ শতাংশ পড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া জিম্বাবুয়ের প্রশাসন। তাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই মাসের শেষেই চালু করা হবে সোনার মুদ্রা।
২০০৮ সালে পুরো বিশ্বই আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছিল। সেই সময় থেকেই জিম্বাবুয়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। পরিস্থিতি এতটাই নাগালের বাইরে চলে যায় যে সেন্ট্রাল ব্যাংককে ১০০ লাখ কোটি ডলারের ব্যাংক নোট ছাপতে হয়েছিল। আর্থিক সংকটের ছোবলে সেই থেকেই ধীরে ধীরে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ফুরিয়ে যেতে থাকে, যা বর্তমানে প্রায় শেষ। এখন দেখার বিষয় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পায় কি না জিম্বাবুয়ে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ