সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় বরিশালের গৌরনদীতে সৌভিক সাহা (১৯) নামে এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে এবার এইচএসসি পাস করেছে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠান।
জানা গেছে, সৌভিক সাহা জেলার গৌরনদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য বেল্টু সাহার ছেলে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সৌভিক সাহার বাবা বেল্টু সাহা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন।
এর আগে, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকার মন্দির কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার শান্তুনু ঘোষ বাদী হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় মামলাটি করেন।
বাদী শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মন্দির কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ওই ছেলে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে এবং তার পরিবারের অকল্যাণ চেয়ে প্রার্থনা হচ্ছে উল্লেখ করে সেখানে সবাইকে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। বিষয়টি প্রমাণসহ দেখানোর পর গৌরনদী মডেল থানার ওসিকে জানাই।’
থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে একটি স্ট্যাটাস দেয় সে। এ ঘটনায় বাদী মন্দির কমিটির সভাপতি ওই কলেজছাত্রকে একমাত্র আসামি করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেন। রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। আজ(গতকাল) দুপুরে বরিশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠান।’
এদিকে আলোচিত ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জনরোষ তৈরির অভিযোগে খুলনায় উৎপল মণ্ডল (২৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আলোচিত ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জনরোষ তৈরির অভিযোগে খুলনায় উৎপল মণ্ডল (২৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
খুলনার পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাষ্ট্র বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জনরোষ তৈরির অভিযোগে মামলা করেছে। মঙ্গলবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সর্দার জানান, কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ভাগবা এলাকায় ওই যুবকের বাড়িতে মঙ্গলবার হামলা চালাতে আসে বেশ কয়েকজন যুবক। তবে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে খুব বেশি ভাঙচুর করতে পারেনি।
তিনি বলেন, হামলা হতে পারে এমন খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন হামলাকারীদের প্রতিরোধ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হামলায় উৎপলের বাড়ির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে পুলিশ এসে ৫ যুবককে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম এস দোহা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কিছু যুবক কমেন্টকারীর বাড়িতে মঙ্গলবার অবস্থান নেয় ও তাকে খুঁজতে থাকে। পরে পুলিশ এসে পাঁচজন যুবককে ধরে আনে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উৎপল মণ্ডলকেও ডেকে নেয়া হয় থানায়
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
এ আইনে প্রতি মাসে গড়ে ৩৪টি মামলায় ৮৬ জনের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রীয়াজ। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন-বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মুখ্য আলোচকের আলোচনায় তিনি এই তথ্য জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নানাভাবে খর্ব হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা কী মানুষের আছে? রাজনৈতিক দলের নেতারাই যদি কথা বলতে না পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কথা বলবে কীভাবে? ডিএসএর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মুক্তভাবে তথ্য, কথা আদান-প্রদানের যে জায়গা ছিল, তা সংকুচিত হয়ে গেছে।
তারা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে— এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৮
আপনার মতামত জানানঃ