কানাডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বরফযুগের একটি লোমশ ম্যামথ শাবকের (হাতিজাতীয় বিলুপ্ত জন্তু) সম্পূর্ণ দেহ হিমায়িত ও মমিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার কানাডার ইয়ুকোন অঞ্চলের ক্লোনদিকে এলাকার একটি স্বর্ণখনির শ্রমিকেরা এই ম্যামথ শাবকের মমিটির সন্ধান পান।
উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে এ ধরনের আবিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে ওই অঞ্চলে মমি অবস্থায় ম্যামথ শাবকের দেহের অংশবিশেষ পাওয়া গিয়েছিল শুধু। খবর বিবিসির।
ম্যামথ হলো হাতির মতো দেখতে অতিকায় লোমশ এক বিলুপ্ত প্রাণীবিশেষ। বরফযুগে এর অস্তিত্ব ছিল।
নতুন সন্ধান পাওয়া ম্যামথ শাবকের মমিটি ৩০ হাজার বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার কানাডার ইয়ুকোন অঞ্চলের ক্লোনদিকে এলাকার একটি স্বর্ণখনির শ্রমিকেরা এর সন্ধান পান। যে এলাকায় মমিটির সন্ধান পাওয়া গেছে, সেটি ত্রোনদেক ওয়েচিন আদিবাসী গোষ্ঠীর মালিকানাধীন।
ইয়ুকোনের স্থানীয় সরকার ম্যামথ শাবকের এ মমিকে ২০০৭ সালে সাইবেরিয়ায় ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চলে পাওয়া ম্যামথ শাবকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তারা বলেছেন, এটি উত্তর আমেরিকায় এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া একমাত্র পূর্ণাঙ্গ মমি। আর বিশ্বে এ ধরনের মমির সন্ধান পাওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি।
ধারণা করা হচ্ছে, ম্যামথ শাবকটি মেয়ে। আদিবাসী হান ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে নুন চো গা। এর অর্থ ‘বড় পশু শাবক’।
ইয়ুকোনের জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ গ্রান্ট জাজুলা বলেন, ‘নুন চো গা দেখতে সুন্দর। বিশ্বে এখন পর্যন্ত বরফযুগের আশ্চর্যজনক যত মমিকৃত প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে, তার একটি এটি।’
ইয়ুকোনের স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, এটি ২০০৭ সালে পাওয়া সাইবেরীয় শাবক লিউবার আকারের সমান। লিউবা ছিল প্রায় ৪২ হাজার বছরের পুরোনো।
উত্তর আমেরিকায় সন্ধান পাওয়া নুন চো গাকে বেশ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর আগে ১৯৪৮ সালে আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে একটি সোনার খনিতে ইফি নামে লোমশ শাবকের সন্ধান মিলেছিল। তবে তার পুরো দেহ পাওয়া যায়নি। আংশিক অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল এটিকে।
সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাউসন শহরের দক্ষিণে ইউরেকা ক্রিক এলাকার মাটিতে খনন করার সময় নুন চো গার গায়ে খননযন্ত্রের ধাক্কা লাগে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করেন এক খনিশ্রমিক। এরপর মমিটি মাটির নিচ থেকে বের করে আনা হয়।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অতিকায় এক প্রাণী ম্যামথ। ম্যামুথুস গণের সব প্রজাতিকেই ম্যামথ ডাকা হয়। তবে ম্যামথদের সবশেষ টিকে থাকা প্রজাতি ছিল লোমশ ম্যামথ। বর্তমান হাতিদের পূর্বপুরুষ ধরা হয় এই ম্যামথ প্রজাতিকে। আকারে তারা অবশ্য ছিল এই হাতিদের চেয়ে একটু বড়। এদের ছিল বিশাল দাঁত, লোমে ভরা দেহ আর বড় শুঁড়।
বরফ যুগের এই প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে চার হাজার বছর আগে। মনে করা হয়, এরা আরো পঞ্চাশ লক্ষ বছর আগে থেকেই ছিল পৃথিবীতে। আদিম মানুষদের আঁকা গুহাচিত্রেও দেখা গেছে এই ম্যামথদের। কিন্তু কেন সদলবলে হারিয়ে গেল এরা?
গবেষকদের একটি দল মনে করেন, বরফযুগের শেষে বিশাল তৃণভূমি ক্রমশ বনে ঢেকে যেতে থাকলে এরা খাদ্যাভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এমন বিচ্ছিন্নতা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, পৃথিবীর তাপমাত্রা তখন ক্রমশ বাড়ছিল। সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে ও বিশাল বিশাল তৃণভূমি বনে পরিণত হয়ে যাওয়ায় তাদের খাবারের অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছিল। ম্যামথরা যেহেতু ছিল বরফযুগের প্রাণী, তাই সে সময়ের হিমশীতল পরিবেশে গায়ে লোম ও চর্বির আধিক্য থাকায় তারা খুব সহজেই মানিয়ে নিয়েছিল নিজেদের।
কিন্তু বরফযুগের অবসান হওয়ায় ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তাদের অবসানও নিশ্চিত হয়ে যায়। তারা পরিবর্তিত তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারেনি। পর্যাপ্ত খাবার কিংবা সুপেয় পানির অভাব, সেই সাথে ক্রমাগত শিকার হয়তো তাদের বিলুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
এই বিশালাকার প্রাণীর বিলুপ্তির পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে আরো কিছু সম্ভাবনার কথা বলা যেতে পারে। যেমন, হঠাৎই নতুন কোনো রোগজীবাণুর আক্রমণ, মহামারি বা বড় কোনো দুর্যোগে তারা প্রাণ হারিয়েছে।
এমনও হতে পারে, ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় জিনবৈচিত্র্য হ্রাস পেয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তারা। কিন্তু, এসবই শুধু অনুমান। বাস্তবে কোনোটারই পক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ নেই।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২৩
আপনার মতামত জানানঃ