বিশ্বের নানাপ্রান্তে শরণার্থী সংকট রয়েছে। বিশ্বে সবই যেন চলছে করোনা আর যুদ্ধ ঘিরে, শরণার্থীরা পড়ে গেছেন আড়ালে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বর্তমান বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ শরণার্থী সংকটে ভুগছে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে রাজনৈতিক, সামরিক, জাতিগত ও মতাদর্শের নানা সংকট মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে জাতি পরিচয়, বেঁচে থাকার অধিকার।
সংঘর্ষ, সহিংসতা এবং অন্যান্য সংকটের কারণে গত বছর বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু বাস্তচ্যুত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিলের( ইউনিসেফ) একটি প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত বছরই সর্বোচ্চ শিশু বাস্তচ্যুত হয়েছে। গত বছর ২২ লাখ বাস্তচ্যুত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে।
৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় এক কোটি ৩৭ লাখ শরণার্থী হয়েছে। আর দুই কোটি ২৮ লাখ শিশু সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জলবায়ু এবং পরিবেশগত কারণে বাস্তচ্যুত হওয়া শিশু ও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে বাস্তচ্যুত হওয়া শিশুদের ইউনিসেফের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ইউনিসেফ বলছে, বাস্তুচ্যুত হওয়া শিশুরা পাচার, শোষণ, সহিংসতা এবং অপব্যবহারের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, আমি আশা করছি শিশুদের বাস্তুচ্যুত হওয়া রোধ করতে সরকারগুলো কাজ করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্বাস্তু ৩ কোটি ৬৫ লাখ শিশুদের প্রায় ৫০ শতাংশই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়সী। বাকিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীদের বয়সী ও ২৫ শতাংশ এখনও স্কুলে যাওয়ার মতো বয়সে পৌঁছায়নি।
৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় এক কোটি ৩৭ লাখ শরণার্থী হয়েছে। আর দুই কোটি ২৮ লাখ শিশু সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
উদ্বাস্তু ও শরণার্থী হওয়ার পাশাপাশি মানবপাচারের শিকারও হয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু। ৩ কোটি ৬৫ লাখ বাস্তুচ্যুত শিশুর মধ্যে ২৮ শতাংশই মানবপাচারের শিকার।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউনিসেফের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংঘাত-গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশগুলোতে শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা এখনও ক্ষীণ। এ কারণে প্রতিদিনই বিশ্বে বাড়ছে উদ্বাস্তু ও শরণার্থী শিশুদের সংখ্যা।’
‘যদি জলবায়ু পরিবর্তন ও সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া শিশুদের সংখ্যা এই তালিকায় যুক্ত হয়, তাহলে তা আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে।’
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার শিশুদের বাস্তুচ্যুত ও পাচার হওয়া রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং যেসব শিশু ইতোমধ্যে উদ্বাস্তু হয়েছে, তাদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করবে।’
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, আগামী দিনগুলোতে বাস্তুহারা ও শরণার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এর মূল কারণ যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্কের টানাপোড়েন অনেক আগেই থেকে আশান্তির ধোঁয়া ওগরাচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক বৈরিতা নতুন করে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।
ইসরায়েলও ইরানকে একহাত নিতে একপায়ে খাড়া। কারণ, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে এখন ইরানই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। ইরান আরো শক্তিশালী হলে ছোট্ট একটি দেশ হয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ছড়ি ঘোরানো বন্ধ হয়ে যাবে। ইয়েমেনে চলছে শিয়া ও সুন্নির ক্ষমতা দখলের লড়াই। সেখানেও ইরান ও সৌদি জোটের সশস্ত্র বিরোধ সুস্পষ্ট।
গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বরং দেশটি নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো শীর্ষ পরাশক্তি রশি টানাটানি করছে। সে দেশ পুরোটাই এখন ধ্বংসস্তূপ। বাসযোগ্য এলাকা বা বাসাবাড়ির বড়ই অভাব।
আছে খাবারসহ নিত্যপণ্যের সংকট। কাজেই সিরিয়া থেকে আরো মানুষ পালাবে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও পাওয়া যাচ্ছে অশান্তির গরম নিঃশ্বাস। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, লাতিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকোতে শান্তি নেই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এখান থেকেও অনেক মানুষ অন্যত্র সরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ