ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ‘পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ’ কায়েমের চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনে দখলদারত্ব অবসানের কোনো ইচ্ছাই নেই ইসরায়েলের। এনিয়ে চলতি বছরের রমজান মাস থেকে ইসরায়েল–অধিকৃত ফিলিস্তিনের মাটিতে বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে।এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে আরবের ৯ দেশ।
পরমাণু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির পথে হাঁটা ইরানকে থামাতে চড়া সুরে কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
ইসরায়েল ও ৯ আরব রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি জোট গঠনের প্রস্তাব তুলেছেন মার্কিন কংগ্রেসের ১০ সদস্যের একটি দল। ইরানের হুমকি মোকাবেলায় এসব দেশগুলোর জন্য একটি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন তারা। ওই দশ সদস্যদের দলে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান উভয় পার্টির সদস্যরাই আছেন। এ খবর দিয়েছে রাশিয়া টুডে।
খবরে বলা হয়, এই বিল পাস হলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের ১০ দেশকে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে। দেশগুলো হলো ইসরায়েল, সৌদি আরব, মিশর, কুয়েত, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান এবং ইরাক। এর অধীনে এসব দেশে একটি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে যা ইরান থেকে ছোঁড়া মিসাইল থেকে দেশগুলোকে রক্ষা করবে।
ডেমোক্রেট আইনপ্রনেতা জ্যাকি রোসেন, করি বুকার, জনি আর্নস্ট এবং জেমস ল্যাংফোর্ড বিলটিকে সিনেটে উপস্থাপন করেছেন। অপরদিকে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে উপস্থাপন করেছেন, ডেমোক্রেট দলের ব্রাড স্নেইডার, ড্যাভিড ট্রোন, জিমি প্যানেটা এবং রিপাবলিকান দলের ক্যাথি ম্যাকমরিস রজার্স, অ্যান ওয়াগনার এবং ডন ব্যাকন। এ নিয়ে তারা এক ঘোষণায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি সমন্বিত আকাশ ও মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তা ওই অঞ্চলকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখবে এবং মার্কিন মিত্রদের প্রতিরক্ষাকে এক করবে।
এদিকে চীন ও রাশিয়ার কঠোর বিরোধিতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর নির্বাহী বোর্ডের ত্রৈমাসিক বৈঠকে আমেরিকা ও তিন ইউরোপীয় দেশের ইরানবিরোধী প্রস্তাবটি পাস হয়েছে।
প্রস্তাবটিতে ইরানের তিনটি ‘অঘোষিত স্থানে’ ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং আইএইএকে পূর্ণ সহযাগিতা করার জন্য তেহরানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
২০১৫ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সই হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আইএইএর নির্বাহী বোর্ডে ইরানবিরোধী প্রস্তাব পাস হলো। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জুন আমেরিকার সমর্থন নিয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি একই ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল এবং সে প্রস্তাবও নির্বাহী বোর্ডে পাস হয়েছিল।
আমেরিকা ও ইসরাইলের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করার লক্ষ্যেই পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ইরান কঠোর ভাষায় এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, দেশটির পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক কাজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।
ইসরায়েল ও ৯ আরব রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি জোট গঠনের প্রস্তাব তুলেছেন মার্কিন কংগ্রেসের ১০ সদস্যের একটি দল। ইরানের হুমকি মোকাবেলায় এসব দেশগুলোর জন্য একটি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন তারা।
ইরান আরও বলেছে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী এবং আইএইএর সদস্য দেশ হিসেবে বেসামরিক কাজে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার তেহরানের রয়েছে।
১৯৮০ সাল থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। ওই সময় থেকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে ইরানের নিরাপত্তা রক্ষক আর ইরানে সুইজারল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে একই ভূমিকা পালন করছে। ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে ইরানিয়ান ইন্টারেস্টস সেকশন হয়ে এবং তেহরানে সুইস দূতাবাসে ইউএস ইন্টারেস্টস সেকশন হয়ে উভয় দেশের যোগাযোগ হতো। ২০১৮ সালে এসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খোমেইনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নিষিদ্ধ করে দেন।
এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরব দেশগুলো প্রধান তিনটি শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো হলো, যুদ্ধের সময় আরব দেশগুলোর দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনের দখল করা জমি হস্তান্তর। সেই শর্তের কোনোটা পূরণ না হওয়ার পরও আরব দেশগুলো ইসরায়েল রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে একের পর আরব দেশের সম্পর্ক জোড়া লাগুক না কেন, বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বহু দূরেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বৃহত্তর এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা ইসরায়েল–ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের বিষয়টি। স্বাভাবিকভাবে, ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, এখন তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
আরব বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করেছে ইসরায়েল। আর ফিলিস্তিনিরা এখনো পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে অধিকৃত অবস্থায় আছে, যা গাজার মতোই একটি উন্মুক্ত কারাগারের শামিল।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, লাভের মধু ইসরায়েলেরই বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা সামরিক—যেটাই হোক না কেন। আরবদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে আনাটা ইসরায়েলের জন্য বড় সাফল্যই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৫
আপনার মতামত জানানঃ