জাপানে শিশু জন্মহার কমে যাচ্ছে। প্রায় চার দশক ধরে এই প্রবণতা জাপানে বিদ্যমান থাকলেও গত বছর শিশু জন্মহার সর্বনিম্নে নেমে যায়।
জাপানে ২০২১ সালে সবচেয়ে কম শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ১৮৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন জন্মহার। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩ জুন) দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সর্বাধিক জনসংখ্যা হ্রাসের রেকর্ড হলো জাপানে।
জাপানে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া নতুন কোনো খবর নয়। দেশটির জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পেয়ে ২০২১ সালের শুরুতে ১২ কোটি ৬৬ লাখের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। গত বছর জাপানে ৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৪ শিশুর জন্ম হয়েছে। এক বছরে শিশু জন্মের দিক দিয়ে এই সংখ্যা গত ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত বছর দেশটিতে জন্মগ্রহণ করেছে ৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৪ শিশু। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৯ জনের। ফলে এক বছরে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ২০৫ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জাপানি নারীদের সন্তান জন্মদানের হার ষষ্ঠ বছরের মতো কমে ১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। পৃথিবীতে বার্ধক্যে পৌঁছানো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর অন্যতম জাপান। দেশটিতে উদ্বেগজনক হারে প্রজন্মগত ব্যবধান বাড়ছে। গত বছর জাপানে বিয়ের হারও কমেছে। ২০২১ সালে দেশটিতে বিয়ে হয়েছে ৫ লাখের কিছু বেশি।
দেশটিতে তরুণদের তুলনায় প্রবীণের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। এ ছাড়া করোনা মহামারিতে সীমানা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটির কর্মী সংখ্যা আরও কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের বছরগুলোতে জাপানে জনসংখ্যা আরও কমবে, সেই সঙ্গে বাড়বে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা। এর কারণ জাপানের সর্বনিম্ন জন্মহার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৬০ সাল নাগাদ জাপানের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই হবে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী।
সামনের বছরগুলোতে জাপানে জনসংখ্যা আরও কমবে, সেই সঙ্গে বাড়বে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা। এর কারণ জাপানের সর্বনিম্ন জন্মহার।
জনসংখ্যার ক্রমাগত পতনে উদ্বিগ্ন জাপান সরকার। বিবাহিত দম্পতিদের বেশি সন্তান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে শিশু পরিচর্যা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। এরপরও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি।
গত কয়েক বছর ধরেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী জাপানে। ফলে দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংকট দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন অনেকে। জাপানকে বলা হয় সুপার এজড জাতি। কারণ এখানকার ২০ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪০ লাখ। তবে ২০৬৫ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়াতে পারে আট কোটি ৮০ লাখে।
করোনা মহামারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় সেবা খাতকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে এবং এই খাতে কাজ করা নারীদের মধ্যে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এই দলভুক্ত কম বয়সের বিবাহিত নারীরা স্বভাবতই সীমিত আয়ের সংসারে নতুন মুখের আগমন নিয়ে খুব বেশি উৎসাহী নন। ফলে এর প্রতিফলন এসে পড়ছে দেশের জনসংখ্যার সার্বিক হিসাবে।
বৈভব ও প্রাচুর্যের দেশ জাপান। জাতীয় আয়ের নিরিখে যা বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলির অন্যতম। আর সেখানেই কিনা উলট পুরাণ! যে ছবি দেখা গিয়েছিল ইতালিতে, সেই একই ছবি উঠে এল জাপানের কিছু এলাকায়। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, জাপানেও অনেক বড় বড় বাড়ি পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। বাড়ি আছে, কিন্তু মানুষের বাস নেই। অনেকেই আছেন, যারা সেদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। তাই বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন অন্যের কাছে।
কিংবা বহুতল বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। এইভাবে জাপানের বহু এলাকায় একাধিক বড় বড় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও একেবারে জনশূন্য পরিস্থিতি। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এমন ছবি স্পষ্টতই উঠে আসছে। কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রথমত জনসংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পাচ্ছে জাপানে। দ্বিতীয়ত, এযুগের তরুণ প্রজন্ম তাদের কাজের তাগিদে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে। যে কারণে জাপানের বহু এলাকায় অনেকটাই জনশূন্য পরিস্থিতি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৪
আপনার মতামত জানানঃ