২০১৭ সালের এপিল থেকে ২০ লাখের বেশি উইঘুর ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক বন্দিশিবিরে রেখেছে চীন সরকার। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ৮৫টি বন্দিশিবিরের হদিস পাওয়া গেছে। সেখানে উইঘুর ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি আজারবাইজান, উজবেকস, কাজাকস ও তুর্কমেন্সের মতো সংখ্যালঘু মানুষদের আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জিনজিয়াংয়ে থাকা একসময়ের বন্দিরা অভিযোগ করেছেন, বন্দিশিবিরে জোর করে রাজনৈতিক মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা, নির্যাতন করা, এমনকি যৌন নিপীড়নও করা হয়। যদিও চীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। উল্টো এসব বন্দিশিবিরকে ‘কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র’ বলে দাবি করেছে তারা।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে লাখ লাখ উইঘুর সংখ্যালঘুদের বন্দি করে রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বন্দিশিবিরে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। এসব পুরনো খবর। তবে নতুন করে অ্যান্ড্রিয়ান জেনজ নামে একজন শিক্ষাবিদ উইঘুরদের ওপর চীনা নিপীড়নের কুৎসিত চেহারা আবারও প্রকাশ করেছেন।
জেনজের প্রকাশিত ফাইলগুলোর মধ্যে জিনজিয়াংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সেক্রেটারি চেন ওরাঙ্গুরের ২০১৭ সালের বক্তৃতাও আছে। সেখানে তিনি বন্দিশিবিরের রক্ষীদের কেউ পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গুলি করার এবং মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি এই অঞ্চলের কর্মকর্তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসীদের ওপর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফাইলগুলোতে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের হাজার হাজার ছবি এবং সরকারি নথি রয়েছে। এসব উইঘুর সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে নির্লজ্জ, কঠোর এবং হিংসাত্মক আচরণ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করে।
তবে চীন দেশটিতে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ফাঁস হওয়া ফটোগ্রাফ এবং অভ্যন্তরীণ নথি একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে জেনজকে পাঠানো হয়েছে । এসব তথ্য হ্যাক করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এছাড়া তিনি এই অঞ্চলের কর্মকর্তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসীদের ওপর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
চীনের উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কিছু ছবি ও তথ্য ফাঁস হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের জিনজিয়াং সফরের সময় ছবিগুলো হ্যাক হয়েছিল। ছবিগুলোতে চীন সরকারের ‘কারাবন্দি কর্মসূচির’ চিত্র প্রকাশ্যে আসে।
এই ছবিগুলো হাতে পেয়েছে বিবিসি। এতে তথাকথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ শিবিরসহ উইঘুরদের গণআটকের প্রমাণ আবারও স্পষ্ট হলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাক করা ফাইলগুলোতে পুলিশের তোলা পাঁচ হাজারের বেশি উইঘুরের ছবি আছে। তাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বন্দি সশস্ত্র রক্ষীর কড়া পাহারায় আছেন।
উইঘুরদের বেশির ভাগই মুসলিম। চীনের উত্তর-পশ্চিমের জিনজিয়াং অঞ্চলে অন্তত এক কোটি উইঘুর সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।
আত্মপরিচয়ের বেলায় তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে মধ্য এশিয়ার লোকজনের কাছাকাছি বলে মনে করেন। তাদের ভাষা তুর্কির কাছাকাছি।
গত কয়েক দশকে চীনের সংখ্যাগুরু হান জাতি সেই অঞ্চলে বাস করতে শুরু করে। এতে উইঘুর সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
তিব্বতের মতো জিনজিয়াং কাগজে কলমে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হলেও, বেইজিং-এর বাইরেও তারা নিজেদের মতো করে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুই এলাকা চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।
চীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ আছে। যদিও এসব প্রত্যাখ্যান করতে দেরি করে না বেইজিং।
চীন সরকার এ বন্দি শিবিরকে ‘চরিত্র সংশোধনাগার’ নাম দিয়েছে। চীন সরকারের দাবি, উশৃংঙ্খল অবস্থা থেকে নিরাপদ ও সুরক্ষা দিতেই তাদের এ কার্যক্রম। চরিত্র সংশোধনাগারের নামে চীন সরকার এ সব মুসলিমদের প্রতি চরম অত্যাচার ও নির্যাতন করছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তা উঠে এসেছে। আর এসব দমন-পীড়নের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ অন্য চীনা নেতাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার তথ্য ফাঁস হয়েছে।
চীন সরকারের জুলুম অত্যাচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে জিনজিয়াংয়ের প্রায় ২৫ লাখ অধিবাসী পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। নানা অজুহাতে উইঘুর মুসলিম নেতৃস্থানীয়দের জেল-জুলুম এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে সরকার।
চীন সরকার কর্তৃক এসব অত্যাচার নির্যাতনে এখনও কোনো উইঘুর মুসলিম প্রতিরোধমূলক কিংবা আত্মরক্ষামূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারপরও দেশটির সরকার উইঘুর মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বর্হিবিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে প্রবাহিত করছে। অথচ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৭
আপনার মতামত জানানঃ