ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে মধ্য এপ্রিল থেকে কমপক্ষে ১৬ হাজার বাসিন্দাকে একাধিক গণকবরে সমাহিত করেছে রুশ বাহিনী।
বর্তমানে রুশ নিয়ন্ত্রিত শহরটির ইউক্রেনীয় মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো এমন দাবি করেছেন। স্ত্রারি ক্রিম, মানহুশ ও ভিনোহরেদন গ্রামের কাছে এসব গণকবর রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেন, গত মাসে স্ত্রারি ক্রিম সমাধিক্ষেত্রে নতুন করে খোঁড়া ২৫টি গর্ত দেখা গেছে।
এসব গর্তে কয়েক স্তরে মরদেহ রাখা হয়। এরপর ব্যক্তিগত সমাধির মতো করে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হয়। ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেন, আমাদের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী মারিউপোলে ২২ হাজার মানুষ মারা গেছেন।
কিন্তু আরও তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রুশ ফ্যাসিস্টদের অপকর্মের ফল আরও ভয়াবহ। এই ঘটনা এবং দখলদারদের অধীনে জনগণের ভয়াবহ অবস্থার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ নজর প্রয়োজন।
মারিউপোলের ইউক্রেনীয় এই মেয়র দাবি করেন, এখনো হাজারো মরদেহ ধ্বংসস্তূপ, সাধারণ সমাধিক্ষেত্র ও অস্থায়ী মর্গে পড়ে আছে।
অবশ্য হতাহতের এই সংখ্যা আলাদাভাবে যাচাইয়ের বিষয়ে কিছু বলেনি আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে রুশ কর্মকর্তাদেরও কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। যুদ্ধে রুশ সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা প্রায়শই বাড়িয়ে বলতে দেখা যায় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের।
এর আগে বিধ্বস্ত ডনবাসের পূর্বাঞ্চলে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে রাশিয়া বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) স্থানীয় সময় দিবাগত রাতে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, আমাদের জনগণের নির্বাসন ও বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমণ রাশিয়ার ‘গণহত্যার’ একটি সুস্পষ্ট নীতি।
এ দিকে খারকিভে রাশিয়ান বোমা হামলায় নয়জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেছিলেন, নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক।
সেখানে পাঁচ মাস বয়সী একটি শিশু ও তার বাবাও প্রাণ হারান। বর্তমানে শিশুটির মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। খারকিভে আহতদের মধ্যে একজন নয় বছর বয়সী মেয়েও রয়েছে বলে জানান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ডনবাসের লুহানস্ক অঞ্চলের একমাত্র অংশ সেভেরোদোনেৎস্ক। স্থানীয় মেয়র অলেক্সান্ডার স্ট্রিউক দাবি করেন, রাশিয়ান সৈন্যরা বর্তমানে সেখানকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন।
সেভেরোদোনেৎস্কের মেয়র বলেছেন, শহরটিতে ১২ থেকে ১৩ হাজার মানুষ এখনো আছেন। যেখানে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হামলায় ৬০ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। রুশ আক্রমণে এক হাজার পাঁচশ জন নিহত হয়েছেন।
তবে গত এপ্রিলে ইউক্রেনের বুচা শহরে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া। উল্টো এ শহরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে রুশ কর্তৃপক্ষ। আর এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করে মস্কো।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ সে সময় বলেন, রুশ সেনারা সরে যাওয়ার পর বুচা শহরে কামান দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে এই তথ্য গোপন করা হয়েছে। এতে বেসমারিক নাগরিকরা হতাহত হয়েছে। এই নৃশংসতার জন্য কিয়েভ প্রশাসন মস্কোর ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, বুচায় নৃশংসতার জন্য রুশ সেনাদের দায়ী করে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা ‘মিথ্যা অভিযোগ’। ইতোমধ্যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ অপ্রমাণিত প্রতিবেদন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, রাশিয়ান সেনাদের বিরুদ্ধে কিয়েভ প্রশাসনের এটি আরেক প্ররোচনা। এছাড়া যেসব ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, সবই কিয়েভ প্রশাসন ও পশ্চিমা মিডিয়ার বানানো।
এর আগে গণহত্যার যে অভিযোগ উঠেছিল, সেসব ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণ দিতে পারেনি ইউক্রেন বা পশ্চিমারা। তাই এবারের অভিযোগও কতোটা প্রশ্নের ঊর্ধে, সেটাই এখন খতিয়ে দেখার বিষয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। শুরু থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাপক হামলা চালায় রুশ বাহিনী। কয়েক দিন আগে আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ইউক্রেনীয় বাহিনীর সর্বশেষ দলটি আত্মসমর্পণ করলে মারিউপোলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ