রুশ হামলায় ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত ৬৮২ এর বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় টেলিগ্রামে এই তথ্য জানিয়েছে। রবিবার (২৯ মে) আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৪২ শিশু নিহত হয়েছে এবং ৪৪০ জন শিশু আহত হয়েছে। এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ চলার কারণে এই তথ্য চূড়ান্ত করা কঠিন। সর্বোচ্চ সংখ্যক শিশু হতাহত হয়েছে দোনেতস্কে ১৫৩ জন এবং খারকিভে ১০৮ জন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ পর্যন্ত টানা ৯৫ দিনের মতো চলছে দেশ দুইটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ বন্ধ এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই। উলটো দেশ দুইটির মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত বেড়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি তার প্রাত্যহিক বক্তব্যে বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া “নিশ্চিতভাবেই গণহত্যার নীতি” অবলম্বন করছে, তবে ইউক্রেনের এই “বিপর্যয়কর পরিস্থিতি” এড়ানো যেত “যদি বিশ্বের শক্তিধরেরা রাশিয়ার সাথে খেলা না করে যুদ্ধ শেষ করতে আসলেই চাপ প্রয়োগ করত।”
জেলেন্সকি বলেন, রাশিয়া “জ্বালানী সরবরাহের জন্য ইউরোপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি ইউরো পায়”, যখন কিনা “ইউরোপীয় ইউনিয়ন ষষ্ঠ দফায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একমত হওয়ার চেষ্টা করছে।”
মারিওপোলে পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর রাশিয়ার লড়াই এখন কেন্দ্রীভূত হয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান দু’টি শহর সিভিয়েরোদোনেতস্ক ও লিসিচানস্কে। শহর দুটি দখলে নিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। হাজার হাজার রুশ সেনা শহরটি ঘিরে রেখেছে। এরইমধ্যে শহর দুটির ৬০ ভাগের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতেও রাশিয়ার তেল বাণিজ্য থামাতে ব্যর্থ হয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। অন্য ক্ষেত্রগুলোতে সহজেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তেল-গ্যাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বেশ ধীর গতি অবলম্বন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ।
জেলেনস্কির অভিযোগ, এ সময়ে জ্বালানি সরবরাহের বিনিময়ে ইইউর ২৭ দেশের কাছ থেকে প্রতিদিন এক বিলিয়ন ইউরো অর্থ পাচ্ছে রাশিয়া।
এ অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিপর্যয়কর ঘটনা এখনও বন্ধ করা যেতে পারে যদি বিশ্ব কিয়েভের পরিস্থিতি নিজেদের পরিস্থিতি বলে চিন্তা করে। রাশিয়ার সাথে না খেলে বরং যুদ্ধ শেষ করার জন্য যদি মস্কোকে চাপ দেয় তবেই এসব বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে।
জেলেনস্কির মতে, রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়টি এক অর্থে জীবন বাঁচানোর মতো বিষয়। এ অবস্থায় দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব, দুর্বলতা, প্রস্তাবের বিরোধিতা ইত্যাদি বিষয় মস্কোকে আরো অনেক সুবিধা করে দেবে। পক্ষান্তরে আগামীতে আরো অনেক ইউক্রেনীয়কে প্রাণ দিতে হবে।
এদিকে, কোন কোন পশ্চিমা কর্মকর্তার মতে, তিন মাস ধরে চলতে থাকা এই যুদ্ধ এমন এক “মারামারিতে” পরিণত হয়েছে যার কোন শেষ দেখা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ এর কর্তৃপক্ষ জানায় যে, রাশিয়ার গোলাবর্ষণে অন্তত সাতজন বেসামরিক মানুষ নিহত ও আরও ১৭ জন আহত হয়েছেন। শহরটির উত্তর এবং পূর্ব দিকে প্রবল লড়াই চলছে।
খারকিভে অবস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান যে, সেখানে বারবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। রুশ বাহিনী শহরের উত্তরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ২০০৮ সাল থেকে আবেদন করে ইউক্রেন। মূলত, এ নিয়েই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তবে সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। ঠিক তার দুদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ