এক অসুখ শেষ হতে না হতেই আরেক অসুখ। মহামারি করোনাভাইরাসের ধকল না ফুরোতেই মাঙ্কিপক্সের খবর। আবার এখন নতুন করে খবর এল ‘অ্যাকিউট হেপাটাইটিস’ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে অজানা এই হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এরই মধ্যে বিশ্বের ৩৩ দেশে অন্তত ৬৫০ জন শিশুর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে শুক্রবার (২৭ মে) এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৩৩ দেশে অন্তত ৬৫০ জন শিশুর দেহে ‘অ্যাকিউট হেপাটাইটিস’ শনাক্ত হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে ২৬ মে’র মধ্যে এসব রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৯৯ জন সন্দেহভাজন রোগী পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। তবে এর উৎসা এখনও ‘অজানা’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোথা থেকে এই রোগের উৎপত্তি হলো তা তদন্ত করছে ডব্লিউএইচও। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের লিভার অনেক সময় অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
ডব্লিউএইচও এর মতে, রোগটি বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ হারে হয়তো ছড়িয়ে পড়বে না। কিন্তু মাঝারি মাত্রার ঝুঁকি রয়েই গেছে।
রোগটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপে। এ পর্যন্ত ইউরোপের ২২টি দেশে ৩৭৪ জনের শরীরে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই শনাক্ত হয়েছে ২২২ জন। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ২৪০ জন রোগী। এ ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৩৪, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৪ এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ৫ জন শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। তবে এর উৎসা এখনও ‘অজানা’।
গুরুতর ও তীব্র এই ভাইরাসকে কখনো ‘অ্যাকিউট হেপাটাইটিস’ আবার কখনো ‘অজানা হেপাটাইটিস’ বলে ডাকা হচ্ছে। রোগটি শিশুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে লিভারকে অকার্যকর করে ফেলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, রোগটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার তীব্র ঝুঁকি না থাকলেও মাঝারি মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ‘অজানা হেপাটাইটিস’ রোগের কথা জানায়। সংস্থাটি বলেছিল, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শিশুরা অজানা হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে বলেছেন, সাম্প্রতিক অজানা হেপাটাইটিসের উৎস সম্ভবত অ্যাডেনোভাইরাস। এটি খুবই সাধারণ একটি ভাইরাস যা শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, এ রোগ ছড়ানোর পেছনে করোনা সংক্রমণের কোনো ভূমিকা আছে কি না, তা তারা তদন্ত করে দেখছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য রোগজীবাণু ও ওষুধের ঝুঁকির কারণগুলোও সিডিসি খতিয়ে দেখছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই আচমকা ব্রিটেনে এই রহস্যজনক ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। করোনায় এখনও শিশুদের জন্য কোভিডের টীকা না আসায় এই মারণ ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে এমনিই উদ্বেগে অভিভাবকেরা। তারপর আবার গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এই নয়া অজানা ভাইরাসের প্রকোপ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৩
আপনার মতামত জানানঃ