ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় ইমামদের সংশ্লিষ্টতা এদেশে এখন ডালভাত হয়ে গেছে। ইমামদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এ ধরণের অপরাধ প্রবণতা।
এদিকে রংপুরের তারাগঞ্জে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের দায়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম আতিকুল ইসলাম ওরফে আতিক হুজুরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ৩ এর বিচারক এম আলী আহাম্মেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন আসামি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তায়েজু রহমান লাইজু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর ঝাকুয়া পাড়ার ওই শিশু আশপাশের অন্য শিশুদের সঙ্গে বাড়ির পাশের ঝাকুয়াপাড়া নতুন মসজিদের ইমাম আতিকুলের কাছে আরবি পড়তে যেত। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর সকাল ৭ টার দিকেও ওই মসজিদে পড়তে যায় সে। এক ঘণ্টা পর অন্য শিশুদের ছুটি দিয়ে ওই শিশুকে মসজিদের পাশে নিজ ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন আতিকুল। বাড়িতে যাওয়ার পর শিশুটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা আতিককে আটক করে। পরে নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে তারাগঞ্জ হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অন্য শিশুদের ছুটি দিয়ে ওই শিশুকে মসজিদের পাশে নিজ ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন আতিকুল। বাড়িতে যাওয়ার পর শিশুটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
পরে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ১০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এছাড়া এমন অসংখ্য ঘটনা আছে যেখানে মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে শিশুরা মসজিদের ইমামদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে; ঘটছে শিশু হত্যার মতো নৃশংস ঘটনাও। সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনা, প্রশাসনের তৎপরতার মুখেও লাগাম টানতে পারছে না এসব ঘটনার।
দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিশুরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মসজিদের ইমাম কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মসজিদ-মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আজ যারা শিশু, কাল তারাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আজ যারা বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একদিন তারাও শিশু ছিলেন। তাই শিশুদের নিয়ে তাদের রয়েছে নানা ভাবনা। কিন্তু সারাদেশে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছেন কখনো মসজিদের খোদ ইমাম বা মাদ্রাসা শিক্ষক তথা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায়/মক্তবে পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৩
আপনার মতামত জানানঃ