মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ কাতার ও সৌদির মধ্যেকার দ্বন্দ্বের কথা সবারই জানা। সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত শক্তিশালী হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটি কাতারের সঙ্গে বিরোধে জড়ায়। আঞ্চলিক পরিসরে কাতার তার শক্তি বৃদ্ধি করছিল, এটা পছন্দ হয়নি সৌদি যুবরাজের। তার উদ্যোগে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি ও তার মিত্ররা। কিন্তু এখন সৌদি আরব চাইছে কাতারের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে। তাহলে কি হার মানছেন সৌদি যুবরাজ? কিন্তু কেন?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ের কারণে সৌদি আরব চাপে পড়ে গেছে। কাতারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা মিললেও বাইডেন প্রশাসন এক্ষেত্রে সোউদির পাশে থাকবে না এটা সহজেই অনুমেয়। যে কারণে আগেভাগে সোউদি চাইছে কাতারের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে। উপসাগরীয় অঞ্চলে বেশ কিছুকাল ধরে ক্রিয়াশীল এই সংকট মেটাতে তৎপর সৌদি আরব। এজন্য দেশটি যেকোনো ছাড় দিতে রাজি। এমনকি নিজেদের মিত্র দেশগুলোকে চাপে রেখেছে তারা। তবে মধ্যস্থতাকারীরা বলছে, উপসাগরীয় সংকট নিরসনে সৌদি আরব আগ্রহ দেখালেও সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা দেয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৭ সালে রিয়াদ সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই মিত্রদের নিয়ে সৌদি আরব উপসাগরীয় প্রতিবেশী কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে। কাতারের টিভি চ্যানেল আলজাজিরা নিয়ন্ত্রণসহ ১৩ দফা দাবি দিয়ে সৌদি জোট ভেবেছিল, অবরোধে কাতারবশ্যতা মেনে নেবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বিপুল সম্পদের অধিকারী কাতার তার পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের নিয়ে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এরই মধ্যে সংকট নিরসনে পর্দার আড়ালে কাজ করে কুয়েত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ার পরই সৌদি প্রশাসন ইস্যুটি সমাধানে নজর দেয়।
আপাত সংকটের সমাধান হতে যাচ্ছে মনে হলেও জটিলতা রয়েই গেছে। কারণ কাতারকে সমর্থন করে তুরস্ক, ইরান এবং রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড ও গাজায় হামাস। আর এ গোষ্ঠীগুলোকেই সৌদি ও তার মিত্ররা নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সৌদি রাজতন্ত্র এবং তার মিত্র বাহরাইন, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৭ সালের জুনে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়। এখন সংকট সমাধানে শিগগিরই একটি চুক্তি হবে।
মধ্যস্থতাকারীরা বলছে, সৌদি আরব নিজে থেকেই সংকট মেটাতে চাইছে। এরই ধারাবাহিকতায় দোহার বিমান সংস্থাগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও গণমাধ্যমে অর্থায়ন বন্ধে শর্তের টোপ রেখে দিয়েছে। সূত্রের দাবি, সৌদি আরব আকাশসীমা ইস্যুতেই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইছে। গত মঙ্গলবার মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আনুষ্ঠানিকভাবে সংকট মেটানোর পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছে। যদিও সৌদি সূত্র বলছে, কাতারের কড়া বিরোধী সংযুক্ত আরব আমিরাতকে চুক্তিতে আনতে বেগ পেতে হয়েছে সৌদিকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা এবং তা বাস্তবায়নে বিরাট ফাঁক থেকে যাবে। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোকে ক্ষমা করতে কাতারের হয়তো অনেক বছর লেগে যাবে। বিপরীতে কাতারের ওপর বিশ্বাস পুনঃস্থাপনেও সৌদি মিত্রদের সময় লাগবে। তবে ভবিষ্যৎ যাই হোক সৌদি যুবরাজ যে এ যাত্রায় হার মেনেছেন, এ থেকে কাতারের শাসকরা স্বস্তি পেতেই পারেন।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ