মঙ্গল গ্রহ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বেশ কৌতূহল দেখা যাচ্ছে মানুষের মাঝে। সম্প্রতি মঙ্গলের একটি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে তুলকালাম।
হুবহু মিশরের র্যামসেস পিরামিডের মতো ‘দরজা’র খোঁজ মিলেছে মঙ্গলে! সম্প্রতি নাসার কিউরিওসিটি রোভারে যে ছবি ধরা পড়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে মঙ্গলের একটি পাহাড়ের গা কেটে যেন দরজার মতো বানানো হয়েছে।
এই ছবি সামনে আসার পর থেকে কন্সপিরেসি থিওরিস্টরা বলছেন, এই ছবিই প্রমাণ করছে যে এক সময় লালগ্রহে ভিন্গ্রহীদের উন্নত সভ্যতা ছিল। ভিন্গ্রহী শিকারি স্কট সি ওয়ারিং-ও একই দাবি করেছেন।
ইউএফও সাইটিংস ডেইলি-তে ওয়ারিং দাবি করেছেন, ‘‘মঙ্গলে যে ভিন্গ্রহীরা ছিল, এই স্থাপত্যই তার নিদর্শন। পাহাড়ের গায়ে দরজার মতো যে প্রবেশ পথ দেখা যাচ্ছে তা অনেকটা মিশরের র্যামসেস পিরামিডের প্রবেশপথের মতো।’’
ওয়ারিংয়ের আরও দাবি, তবে এই দরজার মাপ অনেকটাই ছোট। এর এর থেকে বোঝা যায় মঙ্গলে বসবাসকীরাদের উচ্চতা কেমন ছিল। তিনি বলেন, “মঙ্গলে দরজার মতো যে ছবি ধরা পড়েছে তা পুরাতত্ত্ববিদ এবং মহাকাশ বিজ্ঞানীরা খুব একটা গ্রাহ্য করছেন না।”
তার দাবি, রোভারের পাঠানো ছবিতে তিনিই প্রথম এই দরজার মতো প্রবেশদ্বার চিহ্নিত করেছেন। সেই ছবি ভাইরাল হতে ওয়ারিংয়ের অনুরাগীদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে মঙ্গলে যে এক সময় অত্যাধুনিক সভ্যতা ছিল।
তবে ওয়ারিংয়ের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ ভূ-বিজ্ঞানী নিল হজকিন্স মঙ্গল নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা করছেন।
লাইভ সায়েন্স-কে তিনি বলেন, “মঙ্গলে পাহাড়ের গায়ে দরজার মতো প্রবেশদ্বার নিয়ে যে মতামত উঠে আসছে, তার খুব একটা ভিত্তি নেই। আমার মতে, এটি প্রাকৃতিক কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে মঙ্গলে সভ্যতার কোনও সম্পর্ক নেই। দরজার মতো যে প্রবেশদ্বার দেখা গিয়েছে তার উচ্চতাও মাত্র তিন ফুট।”
এর আগে ২০১৮ সালে দাবি করা হয়, মহাকাশযান মার্স রিকনেসাঁস অরবিটারের (এমআরও) তোলা একটি ছবিতে মঙ্গলে একটি পিরামিড দেখা গেছে।
মজার ব্যাপার হলো, ওই ছবিটি তোলা হয়েছিল ১০ বছর আগে। অনলাইনে এক ‘এলিয়েন-শিকারি’ স্কট সি. ওয়ারিং ওই ছবিটি দেখে মন্তব্য করেন, তিনি মঙ্গলের ওই ‘পিরামিডে’ একদিক মসৃণ এবং অন্য দুইদিক ক্ষয়ে যাওয়া বলে লক্ষ্য করেন। তিনি দাবি করেন, এই পিরামিড এলিয়েনদের তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হয়তো এলিয়েনরা ওই জায়গায় বসতি তৈরির চেষ্টা করছিল।
এমনকি তিনি এটাও বিশ্বাস করেন, ওই একই ধরনের এলিয়েনরা হয়তো পৃথিবীর পিরামিডগুলোকেও তৈরি করেছিল।
কিন্তু এই দাবি অনেক কারণেই হাসির পাত্র হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সব পিরামিড এলিয়েনের তৈরি তা মনে করাটা খুবই হাস্যকর। পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে যেমন রোমান কলোসিয়াম, সেইন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা, এমনকি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং। এগুলো এলিয়েনরা তৈরি করেছে, এমনটা বলা যেমন হাস্যকর, তেমনই পিরামিড এলিয়েনরা তৈরি করে গেছে এটা মনে করাও খুবই হাস্যকর। আর তাছাড়া পিরামিড মানুষ কীভাবে তৈরি করেছিল সেটাও জানা গেছে গবেষণা থেকে। তাই পিরামিড মানেই এলিয়েন, এটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
এর পাশাপাশি, মঙ্গলের ওই ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে তা আদতে পিরামিড বলেও ধরা যায় না। ওই ছবিটার মাপজোখ হিসেব করলে দেখা যায় ত্রিকোণ কাঠামোটি ৪০ বাই ৩০ মিটার। সেটা মিশরের গিজার সবচেয়ে ছোট পিরামিডটির চেয়েও ছোট। এছাড়া ওই পিরামিডটি একটি গভীর খাদের ভেতরে অবস্থিত। তাতে একসময় পানি ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।
তাহলে কী এলিয়েনরা পানির নিচে এই পিরামিড তৈরি করেছিল? না, আসলে এটি পানির স্রোত ও বাতাসের ধাক্কায় তৈরি একটি প্রাকৃতিক পাথুরে কাঠামো। তা দেখে উৎসাহিত হওয়ার তেমন কিছু নেই।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ