করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ কেউ খুব দ্রুতই সেরে উঠতে পারেন, আবার অন্য কারো ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ দেহে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আপনার বয়স, লিঙ্গ, এবং আপনার আগে থেকেই অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কীনা, এরকম অনেক কারণই আপনার কোভিড-১৯ সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আপনার চিকিৎসা কতটা “ইনভেসিভ” হয়েছিল, যেমন ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়েছিল কিনা বা কতদিন ধরে চিকিৎসা হয়েছে – সেটার ওপরও আপনার সেরে উঠতে কত বেশি সময় লাগবে তা নির্ভর করতে পারে।
ল্যানসেটের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনামুক্ত হওয়ার পরেও প্রায় দুই বছর মতো রোগীদের মধ্যে এর লক্ষণ থেকে যেতে পারে।
মূলত, চীনের কোভিড রোগীদের মধ্যে এই গবেষণাটি চালানো হয়। যারা লং কোভিডে ভুগছেন, তাদের মধ্যে করোনা পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
এমনকি, করোনার টিকা নেওয়া থাকলেও এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে বলে উঠে আসে ওই গবেষণায়।
এর অন্যতম কারণ হিসেবে গবেষকরা বলেন, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর সঠিকভাবে শরীরের যত্ন না নেওয়ার ফলেই লক্ষণগুলো থেকে যাচ্ছে।
পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার ফলে এক বছর আগে কোভিড মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরাও ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রার মতো উপসর্গে ভুগছেন।
গবেষণা বলছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার ছয় মাস পরে প্রায় ৬৮ শতাংশ রোগীর মধ্যে লং কোভিডের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সংক্রমিত হওয়ার দুই বছর পর কোভিডের বেশিরভাগ উপসর্গ অত তীব্র না থাকলেও কিছু কিছু লক্ষণ থেকে যাচ্ছে।
ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা ছাড়াও হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, মানসিক উদ্বেগ ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে এসব লক্ষণের মধ্যে।
সাধারণত সেরে উঠতে কতদিন লাগে?
কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের বেশির ভাগেরই দেহে শুধু মাত্র প্রধান দুটি লক্ষণ দেখা যায়। তা হলো জ্বর ও কাশি। তবে তাদের মধ্যে গায়ে ব্যথা, ক্লান্তি বা অবসন্নতা, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ইত্যাদি আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কাশিটা প্রথমে হয় শুকনো, তবে কিছু লোকের ক্ষেত্রে পরে কাশির সাথে মিউকাস অর্থাৎ শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসতে পারে – যাতে থাকবে ফুসফুসের মৃত কোষ যা ভাইরাসের আক্রমণে মারা পড়েছে।
আপনার যদি এসব লক্ষণ থাকে তাহলে এর চিকিৎসা হলো বিছানায় শুয়ে বিশ্রামে থাকা, প্রচুর পানি খাওয়া, এবং ব্যথা দূর করার জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া। এই রকম মৃদু লক্ষণ দেখা দিলে আপনার দ্রুত এবং ভালোভাবেই সেরে ওঠার কথা।
আপনার জ্বর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে সেরে যাওয়া উচিৎ, তবে কাশি হয়তো রয়ে যেতে পারে। চীন থেকে পাওয়া উপাত্ত পরীক্ষা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এধরণের ক্ষেত্রে সেরে উঠতে গড়ে দু’সপ্তাহ সময় লাগে।
কারো কারো ক্ষেত্রে এই রোগ গুরুতর চেহারা নিতে পারে। এটা ঘটে থাকে সংক্রমণের ৭ থেকে ১০ দিন পরে। রোগীর অবস্থার পরিবর্তনটা ঘটতে পারে খুব দ্রুত এবং আকস্মিকভাবে।
এ ক্ষেত্রে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ফুসফুসে জ্বালা শুরু হয়। এর কারণ, দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসকে পরাজিত করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে, তা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এই লড়াইয়ের ফলে দেহের ভেতরে অন্য নানারকম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
এসময় অনেক আক্রান্ত ব্যক্তিকে অক্সিজেন দেবার জন্য হাসপাতালে নিতে হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এরকম অবস্থা থেকে সেরে উঠতে দুই থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রোগীর অবসন্নতা স্থায়ী হতে পারে আরো কিছুদিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রতি ২০ জনের একজনের হয়তো নিবিড় পরিচর্যা বা ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা দরকার হতে পারে।
এর মানে হলো, তাদের সংজ্ঞাহীন করে রাখা এবং ভেন্টিলেটর লাগানো। যে রোগই হোক না কেন, রোগীর যদি ইনটেনসিভ বা ক্রিটিকাল কেয়ারে থাকতে হয়, তাহলে তার সেরে উঠতেও সময় বেশি লাগবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে কোন রোগীকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকতে হলে, তার পুরোপুরি সুস্থ হতে ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে।
কারণ, হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকলে মাংসপেশীর ভর কমে যায়, রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন, এবং হারানো মাংসপেশী আবার তৈরি হতে অনেকটা সময় লাগে।
কোন কোন রোগীর হাঁটার ক্ষমতা ফিরে পেতে ফিজিওথেরাপি দরকার হয়। তা ছাড়া মানসিক সমস্যার সম্ভাবনাও থাকে।
চীন এবং ইতালি থেকে পাওয়া খবরে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সারা শরীরে দুর্বলতা, সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট, সার্বক্ষণিক কাশি, এবং অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা যায়। অনেকের দীর্ঘ সময় ঘুমানোর দরকার হয়।
তবে এর কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অনেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে অল্প কিছুদিন থেকেই সেরে ওঠেন। কারো কারো কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেন্টিলেটরে থাকার দরকার হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১২২৫
আপনার মতামত জানানঃ