কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে একাংশ রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তরে উদ্বেগ রয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার। তবে এই আপত্তির মাঝেই ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপটিতে স্থানান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের আপত্তিকে আমলে নেয়া দুরে থাক বাংলাদেশ সরকার বরং পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই জানিয়ে সংস্থাটির তীব্র সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ভাসানচর ইস্যুতে তৎপরতা না চালিয়ে বিশ্বসংস্থাটিকে মূল প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এর আগে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের প্রাক্কালে জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত আছে। কিন্তু শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি। এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তথ্যও খুবই কম আছে বলে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। জাতিসংঘ তাদের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলে যে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ব্যাপারে জাতিসংঘ তার আগেকার অবস্থানেই রয়েছে, অর্থাৎ ভাসানচরে যাবার ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন জেনে-বুঝে এবং মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর ইস্যুতে জাতিসংঘের এই বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের মঙ্গল চায় সরকার। কক্সবাজার ক্যাম্পের পরিস্থিতি উন্নয়নে ভাসানচর একটি অস্থায়ী প্রকল্প। রোহিঙ্গাদের নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে স্থায়ী প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্য। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের নির্লিপ্ততা গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘকে ভাসানচরে কারিগরি মূল্যায়ন না করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। মিয়ানমারে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর বিনিয়োগেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
[zoomsounds_player artistname=”পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন-” songname=”ভাসানচর সম্পর্কে” type=”detect” dzsap_meta_source_attachment_id=”2821″ source=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2020/12/ভাসানচর-সস্পর্কে-পররাষ্ট্রমন্ত্রী.mp3″ thumb=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2020/12/এ-কে-আব্দুল-মোমেন-a-k-abdul-momen.jpg” config=”default” autoplay=”off” loop=”off” open_in_ultibox=”off” enable_likes=”off” enable_views=”off” enable_rates=”off” play_in_footer_player=”default” enable_download_button=”off” download_custom_link_enable=”off”]
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি জাতিসংঘের এমন বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা সবকিছুতেই সম্পৃক্ত। তবে তারা পিক অ্যান্ড চ্যুজ করে, এটাই দুঃখজনক! ৩ বছর হয়ে গেছে একজনকে ফেরত পাঠাইতে পারছে? ওদের ফেরত নেয়ার জন্য কি করেছে জাতিসংঘ? বিরাট প্রতিষ্ঠান। আপনাদের এখানেও লোক আছে, মিয়ানমারেও আছে? আমরা সিদ্ধান্ত নিলে এর বিরুদ্ধে কথা বলে। কোন প্রপোজাল দিয়েছেন যে এভাবে ফেরত নিবেন? এত বড় সংস্থা আপনারা। এদেরকে জিজ্ঞেস করেন। আমাদের দেশে আমরা কোথায় রাখবো, ইট উইল উই ডিসাইড।”
রোহিঙ্গাদের নামে জাতিসংঘের অর্থায়নকে ঘিরেও প্রশ্ন তোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তারা বাংলাদেশের নামে, রোহিঙ্গাদের নামে টাকা তুলছেন এবং তারাই খরচ করছেন। আমারা জানি না কিভাবে ওনারা খরচ করছেন। তারা ওখানে যাওয়ার জন্য খরচ করলে জিজ্ঞেস করুক। আমাদের কখনো জিজ্ঞেস করেন? শুনেছি, কক্সবাজারকে ডিজাস্টার এলাকা বলে টাকা তুলছেন। কুতুপালং কি ডিজাস্টার এলাকা? প্রতিদিন টাকা নেন। এগুলো তো হরিলুটের মতো মনে হচ্ছে? এর কোন ট্রান্সপারেন্সি আছে? কোন জবাবদিহিতা তারা আমাদের দিয়েছেন?”
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় দিতে এখনো সম্মত হয়নি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো। ২৩টি দেশীয় এনজিও তাদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সহায়তায় ১ বছরের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে তারা।
সম্প্রতি কক্সবাজার আশ্রয় শিবিরে মানবপাচার, মাদক-অস্ত্র কারবারি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় শিবির। অন্যদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তেও দেখা যায় উত্তেজনা। মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাখাইন সীমান্তে টহল দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই অবস্থায়, জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গারাসহ রাখাইনে থাকা ৫ লাখ রোহিঙ্গার মাঝেও দেখা দেয় উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিসংঘের আপত্তি সত্ত্বেও একাংশ রোহিঙ্গা স্থানান্তরে তোড়জোড় শুরু করে সরকার।
এসডাব্লিউ/এসআর/আরা/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ