মাচু পিচু শহর পেরুতে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় ‘ইনকাদের হারানো শহর’। আন্দিজ পর্বতমালা পেরুর অংশের দিকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ইনকাদের সেই হারানো শহর মাচু পিচু। এখন অবশ্য গোটা পাহাড়টির নাম হয়ে গেছে মাচু পিচু। সেখানে শহরটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত নির্মাণ এবং এর অবস্থান ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত।
অন্যদের পক্ষে এই শহর খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর ছিল, তেমনি খুঁজে পাওয়ার পর শহরটিতে আক্রমণ করতে গেলেও কেউ সুবিধা করতে পারবে না। কারণ, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে প্রাকৃতিকভাবেই শহরটি বেশ নিরাপদ ছিল। এজন্য শহরটি ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও পরিচিত।
মাচু পিচু শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার মিটার বা সাত হাজার ৮৭৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এত উঁচুতে কীভাবে তারা এই শহরটি বানিয়েছিল সেটাই সবচেয়ে বড় রহস্য। তাও আবার শত শত বছর আগে। যখন কিনা ইনকাদের মধ্যে চাকার ব্যবহার প্রচলিত ছিল না। তাহলে এতো উঁচুতে পাথর উঠিয়েছিল কিভাবে! যা দিয়ে এই শহর নির্মাণ করা হয়েছিল! ধারণা করা হয় শত শত শ্রমিক পাহাড়ের ঢালু জাইগা দিয়ে ঠেলে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল এই সব পাথর।
শহরটিতে ১৪০ টি স্থাপনার মধ্যে এখনো সবকটিই টিকে আছে। এটি নির্মাণ করতে কোনো প্রকার সিমেন্ট বালুর ব্যবহার না করায় ভূমিকম্পেও এর কোনো ক্ষতি হয়নি। এটি নির্মাণ করতে প্রয়োগ করা হয়েছিল সমসাময়িক কালের সবথেকে সূক্ষ্ম এবং বিখ্যাত বাস্তুবিদ্যার কৌশল।
এখানে বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে রয়েছে কিছু মন্দির, পবিত্র স্থান, উদ্যান এবং আবাসিক ভবনসমূহ। মাচু পিচুতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সিঁড়ি, যার মধ্যে কিছু কিছু সিঁড়ি নির্মিত হয়েছে একটি মাত্র গ্রানাইট পাথরের খণ্ড দিয়ে। এখানে আরো রয়েছে প্রচুর সংখ্যক ঝরনা, যেগুলো পাথর কেটে তৈরি করা ছোট ছোট খালের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত এবং এসব মূলত সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও এই সেচব্যবস্থা ব্যবহার করে একটি পবিত্র ঝরনা থেকে প্রতিটি বাড়িতে পানি সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
মাচু পিচু নির্মিত হয়েছিল প্রায় ১৪৫০ সালের দিকে। তবে তা খুব বেশি দিন ভোগ করতে পারেনি ইনকারা। ১০০ বছর পরেই স্প্যানিশরা ইনকা সভ্যতা আক্রমণ করে। এবং ধ্বংস করে ফেলে তাদের বেশির ভাগ শহর। কিন্তু মাচু পিচু শহরটি গুপ্ত স্থানে হওয়ায় তারা এটি খুঁজেই পায়নি! এদিকে মানুষের উপস্থিতি না থাকার কারণে শহরটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
কয়েকশ বছর ধরে মানুষ এই ঐতিহাসিক শহরটিকে খুঁজেই পায়নি। এরপর ১৯১১ সালে হাইরাম বিংহাম নামের একজন মার্কিন পুরাতত্ত্ববিদ মাচু পিচু শহরটি আবিষ্কার করেন।
এরপর থেকে আস্তে আস্তে মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এটিকে পেরুর সরকার ১৯৮১ সালে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা প্রদান করে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ