ভারতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্থানীয় আদালতে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন গুজরাটের ৬০০ মুসলিম জেলে। ভারতের গুজরাট রাজ্যের পোরবন্দর জেলার গোসাবার এলাকার জেলেরা আদালতে এমন আবেদন করেন।
পোরবন্দরের গোসাবারা জলাভূমির মৎস্যজীবীদের নেতা আল্লারাখা ইসমাইল ভাই থিম্মার গুজরাট হাই কোর্টে গত বৃহস্পতিবার(০৫ মে) আবেদন করেছেন, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দিনে দিনে চরম খারাপ হয়েছে। এর কারণ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের রাজ্য সরকারের বৈষম্যকে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, জীবনধারণ করাটাই দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সে কারণে তিনি এবং তার সঙ্গে ৬০০ জনকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়ার আবেদন করেছেন আদালতে।
আজ সোমবার(০৯ মে) ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পোরবন্দর মোহন দাস করম চাদ গান্ধীর জন্মভূমি গুজরাটের পোরবন্দরে। হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে মুসলিম মৎস্যজীবীরা বসবাস করে আসছেন।
হাই কোর্টে একই আবেদন জানানো হয়েছে গোসাবারা মুসলিম ফিশারমেন্স সোসাইটির পক্ষ থেকেও। ওই সংগঠনের অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা সরকারের বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। ওই সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীদের কোনো রকম সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। নানাভাবে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে।
আবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ওই সম্প্রদায়টি ‘রাজনৈতিক নিপীড়নে’র শিকার। বিভিন্নভাবে স্থানীয় প্রশাসন তাদের হেনস্তা করেছে। এলাকার ১০০টি পরিবারের ৬০০ লোক মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মাছ ধরার জন্য তাদের মৎস্য দপ্তরের অনুমতিপত্রও রয়েছে। তার পরেও গোসাবারা এবং নভি বন্দরে তাদের নোঙর করতে দেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
২০১৬ সাল থেকে তাদের এ ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে পোরবন্দরের ওই মুসলিম মৎস্যজীবীরা।
আবেদনকারী মৎস্যজীবীদের আইনজীবী ধর্মেশ গুর্জার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে গোসাবারা বন্দরে মুসলিম মৎস্যজীবীদের নৌকা চলাচল বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। অনুমতিপত্রেরও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
মৎস্যজীবীদের নেতা আল্লারাখা ইসমাইল ভাই থিম্মার অভিযোগ করেছেন, হিন্দু মৎস্যজীবীদের সরকার সব রকম সুবিধা দিচ্ছে, অথচ তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। তার কথায়, আমাদের ভাতে মারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
হিন্দু মৎস্যজীবীদের সরকার সব রকম সুবিধা দিচ্ছে, অথচ তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না।
মুসলিম জেলেরা জানান, এ সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা সত্ত্বেও কোনো সমাধান হয়নি। অথচ তারা কোনো বেআইনি কার্যকলাপের সাথে জড়িত নয় এবং সময়ে সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্যও প্রদান করেছেন।
হাইকোর্টে দায়ের করা পিটিশনে জেলেরা আরো অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারই মূলত হিন্দু ও মুসলিম জেলেদের মধ্যে বৈষম্য করছে এবং তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না।
বিশিষ্টরা বলছেন, বিজেপি শাসিত দেশটিতে মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। সবসময় আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘু মুসলিমরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১৬
আপনার মতামত জানানঃ