বেসরকারি খাতে বাগেরহাটের মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বেসরকারি খাতে বাগেরহাটের মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। যৌথভাবে চায়নার ও বাংলাদেশের একটি করে প্রতিষ্ঠান এবং হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। সুপারিশকৃত দরদাতা চায়নার কনসোর্টিয়াম অব ইনভেশন এনার্জি, এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং হংকং ভিত্তিক ইনভিশন অব রিনিওয়াবেল এনার্জি লিমিটেড। ১০ টাকা ৫৬ পয়সা কিলোওয়াট পার আওয়ার মূল্যে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে ২০ বছরের চুক্তিতে।
বৈঠক শেষে অনলাইনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে টেবিলে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবসহ মোট ১৪টি ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে এর মধ্যে ১০ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৯ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাব হলো নারায়ণগঞ্জ লিংক সড়ক (আর-১১১) (সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া) ৬ লেনে উন্নীতকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্যাকেজের কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ টাকা। কাজটি যৌথভাবে পেয়েছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড ও হাসান টেকনো ব্রাদার্স লিমিটেড। এখানে লিড পার্টনার হিসেবে থাকছে তাদের ব্রাদার্স লিমিটেড।
এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ) (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মাল্টিপারপাস ইনসেপ্ট অন ভেসেল ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন। দুই লটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। লট ওয়ানের ক্রয়মূল্য ৫৭ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং লট ২-এর ক্রয়মূল্য ৫০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে জেএফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড, আনন্দ শিপইয়ার্ড ও স্লিভওয়ে লিমিটেড।
চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কাতার ও সৌদি আরব থেকে ৭৫ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া সার ক্রয়ের তিনটি পৃথক প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে সরকারের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৭ কোটি ৮৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অতিরিক্ত সচিব জানান, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজ থেকে ৮ম লটে ২৫ হাজার মেট্রিকটন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন প্রস্তাব করা হয়। ৫৬ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকায় সার আনা হবে। বৈঠকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের জন্য সৌদি আরবের এসএবিআইসি থেকে ৯ম লটে ২৫ হাজার মেট্রিকটন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন প্রস্তাব। ৫৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় এ সার আনা হবে।
চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের এসএবিআইসি ২৫ হাজার মেট্রিকটন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন প্রস্তাব। ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকায় এ সার কেনা হবে। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পের আওতায় আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণকাজের সুপারভিশন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্রিকো ফ্রান্সের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব। ২১ কোটি ৫৫ লাখের সঙ্গে ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা যুক্ত হয়ে ভেরিয়েশন ৪৪ কোটি ৯ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অতিরিক্ত সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্যাকেজ ২-এর আওতায় ৫০ হাজার টন নন-বাঁশমতি সেদ্ধ চাল ক্রয় প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়েছে। এর সুপারিশকৃত দরদাতা হচ্ছে ভারতের মুম্বাইয়ে এম এস রিকা গ্লোবাল ইমপ্যাক্টস লিমিটেড। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরে আবু সালেহ বলেন, ২ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার বা ১৭১ কোটি ৪৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় এ চাল কেনা হচ্ছে জানিয়ে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা ২৮ পয়সা দেশের বন্দর পৌঁছানো পর্যন্ত খরচ পড়বে। প্রতি টনে ক্রয়মূল্য দাঁড়াবে ৪০৪ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার। ভারত থেকে এ চাল আসবে।
এর আগেও গত ৩৩তম ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ১৭৬ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৫০ হাজার টন নন-বাঁশমতি সেদ্ধ চাল ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল কমিটি। তখন প্রতি কেজি চালের দাম পড়েছিল ৩৫ টাকা ২৭ পয়সা। আর প্রতি টনে ক্রয়মূল্য দাঁড়াবে ৪১৬ মার্কিন ডলার। এর সুপারিশকৃত দরদাতা হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এম এস পি কে অ্যাগ্রি লিংক প্রাইভেট লিমিটেড।
এসিডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ