এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত বুনো পাখি ও হাঁস-মুরগির হয়ে থাকে। মানবশরীরে সংক্রমণের নজির খুবই কম। তবে চীনে প্রথমবারের মতো মানবশরীরে এই এইচ৩এন৮ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে।
চার বছর বয়সী এক শিশুর শরীরে এটি শনাক্ত হয়। তবে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকজনের মধ্যে এই ফ্লুর ব্যাপক সংক্রমণের ঝুঁকি কম। খবর এএফপির।
উত্তর আমেরিকায় এক ধরনের হাঁসে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ২০০২ সাল থেকে এভিয়ান ফ্লুর এইচ৩এন৮ ধরনটি ছড়াতে থাকে। এটি ঘোড়া, কুকুর ও সিলকে সংক্রমিত করার জন্য পরিচিত হলেও অতীতে মানবশরীরে শনাক্ত হয়নি।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, মধ্যাঞ্চলের হেনান প্রদেশের চার বছর বয়সী এক ছেলের শরীরে ফ্লুর ধরনটি শনাক্ত হয়।
সূত্র মতে, জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিবৃতিতে এনএইচসি জানিয়েছে, শিশুর পরিবার বাড়িতে মুরগি পালন করে। প্রচুর বুনো হাঁস আছে, এমন এলাকায় তারা বসবাস করে।
সরাসরি মুরগি বা অন্য কোনও পাখির মাধ্যমেই বাচ্চাটি সংক্রমিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মানুষকে কার্যকরভাবে সংক্রমিত করার সক্ষমতা ধরনটির মধ্যে পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।
এনএইচসি আরও জানায়, ওই শিশুর সংস্পর্শে আসা লোকজনের মধ্যে কোনো ধরনের ‘অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি’।
তারা বলছে, শিশুটির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির সংক্রমণ। ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার তেমন ঝুঁকি নেই।
প্রশাসনের তরফে ওই শিশুর সংক্রমিত হওয়ার ঘটনাকে ব্যতিক্রম বলে অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর থেকে বাকিদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানানো হয়েছে।
তবে সরকারি সংস্থাটি লোকজনকে মৃত ও অসুস্থ পাখি থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করেছে। একই সঙ্গে জ্বর অথবা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত বুনো পাখি ও হাঁস-মুরগির হয়ে থাকে। মানবশরীরে সংক্রমণের নজির খুবই কম।
মহামারির আশঙ্কা কতটা?
প্রসঙ্গত, বার্ড ফ্লু পাখিদের একধরনের জ্বর৷ কিন্তু এই জ্বরটির জন্য দায়ী এক ধরনের ভাইরাস, যার নাম এইচ৫এন১৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে৷ এর বেশ কিছু স্ট্রেইন আছে।
উল্লেখ্য, বন্য ও খামারজাত পাখির মধ্যেই এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু সংক্রমণ হয়। মানবদেহে এই সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা অত্যন্ত বিরল। তবে বার্ড ফ্লুর এইচ৫এন১ এবং এইচ৭এন৯ স্ট্রেইন থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্বর, সর্দিকাশি সহ ইনফ্লুয়েঞ্জার যাবতীয় উপসর্গ দেখা যায়।
এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো বন্য পাখি, সামুদ্রিক বা শীতের অতিথি পাখির মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে৷ যেমন অতিথি পাখি কোনো পুকুরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় মলত্যাগ করলে সেই পুকুরে নামা হাঁস ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে৷ সেই হাঁস থেকে ডিম বা মাংসের মাধ্যমে ভাইরাসটা ঢুকে যেতে পারে মানবদেহে৷
অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মনে শঙ্কা জেগেছে যে, এইচ৫এন১ ভাইরাসের কারণে হয়ত বহু লোকের প্রাণ যেতে পারে৷ যেমনটা এর আগে অন্তত তিনবার হয়েছে৷ ১৯১৮-১৯ সালে এইচ১এন১-র কারণে চার কোটি, ১৯৫৭-৫৮ সালে এইচ২এন২-র কারণে ২০ লাখ এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে এইচ৩এন২-র কারণে সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে গোটা বিশ্বে৷
তবে আশার কথা, বার্ড ফ্লু এখনো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেনি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫০ জন মানুষ বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে মারা গেছে ৩৮৬ জন৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছেন৷
বাংলাদেশে মুরগির দেহে বার্ড ফ্লু প্রথম ধরা পরে ২০০৭ সালে৷ তখন সারা দেশে মুরগির খামার ছিল প্রায় দেড় লাখ৷ পরবর্তীতে বার্ড ফ্লু আতঙ্কে গণহারে মুরগি নিধন শুরু হওয়ায় খামারের সংখ্যা অনেক কমে যায়৷ এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন অনেক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ