আজকের দিনে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অনবরত নতুন নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে। আর এই কারণে সমগ্র বিশ্বে নিজেদের সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করতে ব্যয় করছে প্রচুর পরিমাণে অর্থ। বছরব্যাপী বৈশ্বিক মহামারি করোনার উপর্যুপরি ধাক্কায় টালমাটাল পৃথিবীতে থেমে নেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা।
মহামারি করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) বিধ্বস্ত গোটা বিশ্ব। সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও ২০২১ সালে বিশ্বে সামরিক ব্যয় কমেনি৷ ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে আবারও সামরিক ব্যয় বেড়েছে। শুধু তা–ই নয়, গত বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল সবচেয়ে বেশি।
সোমবার(২৫ এপ্রিল) সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই।
ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হলেও বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। দেশগুলো তাদের অস্ত্রাগারে অস্ত্র বাড়িয়েছে। গত বছর বৈশ্বিক সামরিক খাতে ব্যয় দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বের সামরিক ব্যয় সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১ সালে বিশ্বের সামরিক ব্যয় ছিল ২১ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। গত বছর মোট বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ২১ হাজার ১৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়কারী শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া। মোট বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ৬২ শতাংশ সম্মিলিতভাবে ব্যয় করেছে এই পাঁচটি দেশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক খাতে ব্যয় করেছে আট হাজার ১০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় এক দশমিক ৪ শতাংশ কম। ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে ২৪ শতাংশ অর্থায়ন বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই সময়ে অস্ত্র কেনার পেছনে বরাদ্দ কমিয়েছে ছয় দশমিক ৪ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন ২০২১ সালে দুই হাজার ৯৩০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করেছে। এটি ২০২০ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ভারতের গত বছর সামরিক ব্যয় ছিল সাত হাজার ৬৬০ কোটি ডলার, যা ২০২০ সালের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
রাশিয়ার সামরিক ব্যয় বিশ্বে শীর্ষ ব্যয়কারী দেশের মধ্যে পঞ্চম। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দেশটি দুই দশমিক ৯ শতাংশ সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। এতে তাদের মোট খরচ হয়েছে ৬৫৯ কোটি ডলার।
এসআইপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক দিয়োগে লোপেজ ডি সিলভা এএফপিকে বলেছেন, ‘২০২১ সালে টানা সপ্তম বছরের মতো বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়ে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। এর আগে কোনো এক বছরে বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে দেশগুলোর যৌথ ব্যয় এত বেশি হতে দেখা যায়নি।’
ডি সিলভা জানিয়েছেন, সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চম। ২০২১ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো দেশটির সামরিক ব্যয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। সামরিক ব্যয় রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ৪ দশমিক ১ শতাংশ, বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও যা অনেক বেশি।
এএফপি বলছে, তেল ও গ্যাস বিক্রি করে প্রচুর আয় করে রাশিয়া। সেই অর্থের কারণে দেশের সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। লোপেজ ডি সিলা যেমন বলেছেন, ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে রাশিয়ার সামরিক খাতে ব্যয় দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। আর চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ার বাহিনী।
গবেষকেরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা হওয়ার কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর আগে ওই সময় রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করছিল।’
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে। এর পর থেকে ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৭২ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে দেশটির সামরিক খাতে ব্যয় কমে ৫৯০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। তবে এরপরও ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিটি) ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ইউরোপে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এতে করে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যান্য দেশও সামরিক খাতের ব্যয় বৃদ্ধি করছে। ন্যাটোর আটটি দেশ গত বছর জিডিপির ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করার লক্ষ্য পূরণ করেছে। তবে ২০২০ সালের সাত দেশ এ লক্ষ্য পূরণ করেছিল।
এসআইপিআরআইয়ের গবেষক লোপেজ ডি সিলভা আরও জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক খাতে ব্যয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৭০২
আপনার মতামত জানানঃ