আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। সদরঘাট নদীবন্দরসহ দেশের সবকটি নৌ-বন্দর ও লঞ্চঘাটে এবং খেয়া পারাপারের ৪ শতাধিক ঘাট পয়েন্টে বিআইডাব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের ইজারাদারেরা চুক্তির শর্ত লংঘন করে অতিরিক্ত টোল আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে এমন অতিরিক্ত টোল আদায়ের বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সদরঘাটে নদীতে নামতে-উঠতে যাত্রীপ্রতি টোল নেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী খেয়া পারাপারে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আদায়ের কথা বলা আছে। এখানে কেউ পরিবারের জন্য বাজার-সদাই নিয়ে পারাপার হলে তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ২০/৩০/৫০/১০০ টাকা হারে অবৈধভাবে চাঁদা নিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ নিয়োজিত ইজারাদার। যদিও এই ঘাটে ইজারাদারের নৌকায় পারাপারের ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আদায়ের চুক্তি রয়েছে।’
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশের নৌ-পথের যাত্রী পারাপারে এ ধরনের লুটপাট বাণিজ্য শুধু সদরঘাট নয়, বিআইডব্লিউটিএ ইজারাকৃত সারাদেশের ৪ শতাধিক নদীবন্দর ও খেয়াঘাটের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ঘাট ও খেয়া পারাপার পয়েন্টে এ ধরনের হরিলুটের মহোৎসব চলছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌপথে যাত্রী হয়রানি, টোল নৈরাজ্য বন্ধে বার বার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের নৈরাজ্য বন্ধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বা বিআইডব্লিউটিএ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
যাত্রীরা অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের নাজেহাল করা হচ্ছে। এসব ঘাটে টোল আদায়ের জন্য ইজারাদাররা এলাকার মাস্তান প্রকৃতির উশৃঙ্খল যুবকদের দায়িত্ব দেওয়ার ফলে যাত্রীদের অনেকেই তাদের চাহিদামত অতিরিক্ত টোল ও অবৈধ চাঁদা দিয়ে নদী ও ঘাট পারাপার হতে হচ্ছেন। অনেকের দামী মালামাল নদীর পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এমনকি মারধরের শিকার হচ্ছেন। এতে অসহায় যাত্রীদের সরকারের ওপর নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়’, যোগ করেন তিনি।
এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
দেশের নৌ-পথের যাত্রী পারাপারে এ ধরনের লুটপাট বাণিজ্য শুধু সদরঘাট নয়, বিআইডব্লিউটিএ ইজারাকৃত সারাদেশের ৪ শতাধিক নদীবন্দর ও খেয়াঘাটের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ঘাট ও খেয়া পারাপার পয়েন্টে এ ধরনের হরিলুটের মহোৎসব চলছে।’
এদিকে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের অ্যাকশন চায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলেছে, চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চলমান সংস্কার ও নির্মাণকাজ ঈদের আগে ও পরে মোট ১৪ দিন বন্ধ রাখতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া চিঠিতে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গতকাল দেওয়া এই চিঠিতে সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান অবস্থা, যানজট নিরসন এবং ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই।
প্রস্তাবগুলো হলো—
এক. বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে সংস্কার ও নির্মাণকাজ চলায় যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়, যা সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি করে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সব প্রকার সংস্কার ও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা দরকার।
দুই. যেসব স্থানে বেশি যানজট হয়, সেসব স্থানে সার্বক্ষণিক হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিন. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চার. রাজধানীর জয়কালী মন্দির ও ইত্তেফাক মোড়ে প্রতি রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেআইনিভাবে চাঁদা তোলেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা দরকার।
জানা গেছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও চাঁদাবাজি রোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরও অপরাধ, চাঁদাবাজি রোধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি না থামাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে। সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ওপর নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দারা। অভিযোগ রয়েছে, পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজিতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন অসাধু পুলিশ সদস্যরাও। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ সদর দফতরকে নির্দেশনা দিয়েছে। এরপর পুলিশ সদর দফতর সারা দেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে চাঁদাবাজি বন্ধের। পুলিশ সদর দফতর গণমাধ্যমকে জানিয়েছে- পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা তথ্য ছাড়া মহাসড়ক অথবা সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী কোনো গাড়ি থামানো যাবে না।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এক সময়ের চাঁদাবাজরা এখন টোলের নামে চাঁদাবাজি করছে। শুধু টার্মিনাল থেকে বের হওয়া এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত বাস-মিনিবাস থেকে টোল আদায় করার বিধান থাকলেও বেপরোয়াভাবে তারা এখন টোল আদায় করছে। এমনকি চলতি গাড়ি থামিয়েও টোলের নামে চাঁদাবাজি করে থাকে। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০৯
আপনার মতামত জানানঃ