এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে বড় ধূমকেতুটি ঘণ্টায় ৩৫ হাজার ৪০৫ কিমি বেগে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধূমকেতুর ওজন প্রায় ৫০০ ট্রিলিয়ন টন। এর বরফের নিউক্লিয়াস ১২৮ কিমি প্রশস্ত, যা অন্যান্য পরিচিত ধূমকেতুর কেন্দ্রগুলির চেয়ে ৫০ গুণ বড়। এই নিয়েই এখন আলোচনা শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক মহলে। খবর আনন্দবাজার
নাসার হাবল টেলিস্কোপ জানিয়েছে, মহাকাশে বৃহত্তম ধূমকেতুর মূল অংশটির ব্যাস প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ তার ভিতরে ১০টি শহরকে স্বচ্ছন্দে পাশাপাশি বসানো যেতে পারে।
নাম বেহেমথ। নাসা এর খোঁজ পেয়েছিল ২০১০ সালেই। তবে চেহারার হদিশ পেতে লেগে গেল আরও ১২ বছর। নাসা বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, এ যাবৎ যত ধূমকেতু দেখেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা, তার মধ্যে এটিই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড়।
সাধারণত ধূমকেতুকে দেখতে হয় লম্বাটে। মূল অংশের পিছনে গ্যাসের লম্বা আস্তরণ থাকে। সূর্যের যত কাছে আসে ধূমকেতু, ততই সূর্যের তাপে বিস্তৃত হতে থাকে গ্যাসের আস্তরণ। নাসার হাবল টেলিস্কোপ বেহেমথের গ্যাসের আস্তরণের ভিতর থেকে ধূমকেতুর মূল অংশ বা নিউক্লিয়াসের মাপজোক করেছে।
নাসা জানিয়েছে, সাধারণভাবে এতদিন যে সব ধূমকেতু দেখা গিয়েছে, বেহেমথের নিউক্লিয়াস তার থেকে আকারে অন্তত ৫০ গুণ বেশি বড়। এর ভর প্রায় ৫০০ লাখ কোটি টন। যা এর আগে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ধূমকেতুর ভরের কয়েকশো হাজার গুণ বেশি। নাসার খাতায় এই ধূমকেতুর আরও একটি নাম রয়েছে—সি/২০১৪ ইউএন২৭১। তবে এই ধূমকেতুর বেহেমথ নামটিই বেশি পরিচিত। যার অর্থ অতিকায় দৈত্যাকার জন্তু।
সৌরজগতের প্রান্তিক এলাকা থেকে পৃথিবীর দিকে ঘণ্টায় ৩৫ হাজার কিমি গতিবেগে ছুটে আসছে বেহেমথ। নাসার হিসেব অনুযায়ী ২০৩১ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে বেহেমথ। তবে এই ধূমকেতু থেকে পৃথিবীর কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। নাসা একটি টুইট করে আশ্বস্ত করেছে, পৃথিবীর থেকে শনির দূরত্ব যতখানি এই ধূমকেতুও ততটাই দূরত্বে থাকবে।
C/2014 UN271 নামের ধূমকেতুটি এক দশকেরও বেশি আগে ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রথম দেখা গিয়েছিল। তখন এটি সূর্য থেকে ৪.৮২ বিলিয়ন কিমি দূরে ছিল। সৌরজগতের প্রান্ত থেকে তার কেন্দ্রের দিকে যাত্রা করছিল। এর ভর অন্যান্য ধূমকেতুর তুলনায় ১ লক্ষ গুণ বেশি যা সাধারণত সূর্যের কাছাকাছি পাওয়া যায়।
মহাকাশে বৃহত্তম ধূমকেতুর মূল অংশটির ব্যাস প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ তার ভিতরে ১০টি শহরকে স্বচ্ছন্দে পাশাপাশি বসানো যেতে পারে।
পৃথিবীতে এবং মহাকাশে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা তখন থেকে এটি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বিশ্বাস করেন ২০৩১ সালে এটির যাত্রা আমাদের থেকে শনি গ্রহের মতো দূরে একটি বিন্দুতে শেষ হবে। বিজ্ঞানীরা এটি দেখেছিলেন যে এটি একটি দৈত্যাকার ধূমকেতু, হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি থেকে এর দৈত্য আকারের সাম্প্রতিকতম অনুমান করা হয়েছে।
তবে এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বিশ্বাস করে যে এটি সূর্য থেকে প্রায় ১.৬০ বিলিয়ন কিলোমিটারের বেশি কাছে আসবে না।
ধূমকেতুর আকার নির্ণয় করা খুব কঠিন, কারণ এর চারপাশে অনেক ধূলিকণা রয়েছে, যার কারণে এটি দেখা খুব কঠিন। যাই হোক, বিজ্ঞানীরা ধূমকেতুর কেন্দ্রে উজ্জ্বল বিন্দুটি ভালোভাবে দেখে এবং কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে এটি আবিষ্কার করেছেন। এই ধূমকেতুটি ১০০ কোটি বছর পুরানো এবং এটি আমাদের সৌরজগতের প্রথম দিকের একটি অবশিষ্টাংশ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫১
আপনার মতামত জানানঃ