চুরির অপবাদ দিয়ে মাদারীপুরের কালকিনিতে আসিক চৌকিদার নামে এক স্কুলছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রেজাউল করিম ভাষাইয়ের বিরুদ্ধে।
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেজাউল করিম ভাষাইয়ের লাঠি দিয়ে আসিফ চৌকিদারকে পিটানোর ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। স্কুলছাত্র আসিক চৌকিদার বর্তমানে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নির্যাতনের শিকার আসিক চৌকিদার খৈয়ারভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে পূর্ব কমলাপুর গ্রামের হিমজাল চৌকিদারের ছেলে ।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেছেন, কালকিনির ডাসার এলাকার কমলাপুর বাজারে কালাই শিকদারের হার্ডওয়ারের দোকান থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিছু টাকা আর মোবাইল চুরি যায়। এই চুরির ঘটনার অভিযোগ এনে আসিক চৌকিদারকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় কালাই শিকদারের বড় ভাই আওয়ামীলীগ নেতা রেজাউল করিম ভাষাই শিকদার। ভাষাইয়ের নেতৃত্বে ৫ থেকে ৬ জন মিলে আসিফকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম পিটানো শুরু হয়। এক পর্যায়ে তার মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এরপর বুকের ওপর উঠে লাথি-ঘুসি মারতে থাকে তারা। পরবর্তীতে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে এ নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। নির্যাতনের শিকার আসিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই ঘণ্টা আমাকে পেটানো হয়েছে। ব্যথায় শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে গেছে। দুদিন ধরে রাতে ঘুমাতেও পারি না।
এ ঘটনায় ৬ ডিসেম্বর, রবিবার রাতে আহতের পিতা হিমজাল চৌদিকার বাদী হয়ে রেজাউল করিম ভাষাই, কালাই শিকদার, আবু হাওলাদার ইঞ্জিল শিকদার, আতিয়ার বেপারী, ইউনূস সর্দারসহ অজ্ঞাত আরো তিন-চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে আসিকের মা মনিরা বলেন, চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে ৮ থেকে ১০ জন মিলে নির্যাতন করেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত রেজাউল করিম ভাষাই পলাতক রয়েছেন।তার ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াদ মাহমুদ জানান, স্কুলছাত্র আসিকের শরীরের আঘাতের বেশ চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে।
এ ব্যাপারে ডাসার থানার ওসি আবদুল ওহাব সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আহতের পিতা বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছে। আমরা দোষীদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দোষীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
শনিবার রাতে নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়। মানবাধিকার কর্মী মিঠু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, একজন স্কুলছাত্রকে চুরির অভিযোগে এভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। দেশে আইন আছে তারা ব্যবস্থা নিতে পারতো। ভাষাইয়ের আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ঠিক হয়নি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এসডব্লিউ/ফাআ/২১৪৫
আপনার মতামত জানানঃ