‘আমি বাঁচতে চাই’ এমন করুন আকুতি নিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আজমীর শেখের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুবর্ণা ও তার পরিবার। বুধবার (৩ মার্চ ) দুপুর ১২ টার দিকে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহম্মেদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ভুক্তভোগী সুবর্না ও তার মাকে ৫০ দিন বাসায় আটকে রেখে আজমির শেখ নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
ওই তরুণী জানান, যুবলীগ নেতা আজমীর শেখের ছোট ভাই প্রিন্স আমাকে পছন্দ করত। বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি আজমীর শেখ ও তার দুই বোনের কাছে জানানো হয়েছিল। প্রিন্স আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। এ নিয়ে আজমীর শেখের সঙ্গে প্রিন্সের ঝগড়া হয়। এর রেশ ধরে প্রিন্স শেখ আত্মহত্যা করে। এই আত্মহত্যার দায় আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়।
এই আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বরে আমিসহ আমার পরিবারকে আজমীর ও তার ফুপাতো ভাই বিটু ও নান্টু আমাদের মারধর করে আহত করে। পরে পুলিশ আসলে তখন আজমীর শেখের বাবা নিজে সাক্ষী দেয় তার ছোট ছেলে প্রিন্স আজমীরের জন্যই মারা যায়। পরে আজমীর দলের ক্ষমতা দেখিয়ে তার ভাইয়ের মৃত্যুর দায় আমার উপর চাপিয়ে দেয়।
আমার ভাই ও বাবাকে করেছে বাড়ি ছাড়া। আমার মা ও আমাকে ৫০ দিন তালাবন্ধভাবে আটক করে রাখে। এই ৫০ দিন মুড়ি ও রুটি খেয়ে বেঁচে ছিলাম। কোনো আত্মীয় স্বজন আসতে পারে নাই, তার সন্ত্রাস বাহিনীর কারণে। আমাদের জায়গা দখল করে বাসায় সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, আজমীর শেখ ও তার সন্ত্রাস বাহিনী আমাকে এসিড, ধর্ষণ ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
আজমীর তার সন্ত্রাস বাহিনীর দ্বারা আমার পরিবারকে নানানভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। দলের ক্ষমতার কারণে আমরা খুব অসহায়। এ সময় সুবর্ণার পরিবার ও স্থানীয়রা আজমীর শেখ, বিটু ও নান্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা ও গুম করার কথা তুলে ধরেন। ওই তরুণী মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার তিন ভাই ও এক বোন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ওই তরুণীর বাবা, মা, ভাই ও মামা।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আজমীর সেখ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের দক্ষিণ দেওসার এলাকার বাসিন্দা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজমীর গণমাধ্যমকে বলেন, ওই সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে, সবগুলোই মিথ্যা। তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য একটি পক্ষ ওই মেয়েকে দিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।
ওই তরুণীর গায়ে অ্যাসিড নিক্ষেপ ও তাকে ধর্ষণের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে আজমীর শেখ বলেন, যে পক্ষ তাকে দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে, তারাই ওই তরুণীর গায়ে অ্যাসিড নিক্ষেপ ও তাকে ধর্ষণ করতে পারে। এ জন্য মেয়েটিকে সচেতন থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। সুবর্ণা ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামীলীগ নেতা আজমীর শেখের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১২৫
আপনার মতামত জানানঃ