একই বাসায় থাকার সুবাদে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্কের এক পর্যায় অশ্লীল ভিডিও সংগ্রহ। তারপর সেই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেলিং শুরু করে দুজনের মধ্যে শারিরীক সম্পর্ক হয়। তারপরও সেই অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কারণে, খুন করে নেয়া হয় প্রতিশোধ।
৬ ডিসেম্বর ২০২০, রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন মাধব দেবনাথ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার বিথী দেবনাথ। ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, একই বাসায় থাকার সুবাদে মাধব দেবনাথ ও বিথী দেবনাথের মধ্যে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্কের এক পর্যায়ে বিথী দেবনাথের অশ্লীল ভিডিও সংগ্রহ করেছিলেন মাধব দেবনাথ। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিথী দেবনাথের শারিরীক সম্পর্ক করেছিলেন মাধব। কিন্তু তবুও সেই সেই ভিডিও বিথী দেবনাথের স্বামীকে পাঠান মাধব দেবনাথ। আর এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মাধব দেবনাথকে সুযোগে পেয়ে হত্যা করেন বিথী দেবনাথ। নিখোঁজের তিনদিন পর শনিবার বিথী দেবনাথের খাটের নিচ থেকে মাধব দেবনাথের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জবানবন্দিতে বিথী দেবনাথ উল্লেখ করেছেন, তার স্বামীর ফুফাতো ভাই মাধব দেবনাথ। মাধব দেবনাথ তার স্বামীর সঙ্গে থেকে স্বর্ণ তৈরির কাজ শেখেন। মাধব দেবনাথ তার শ্বশুর বাড়িতে মাসে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খোরাকি (খাবার ও থাকা বাবদ) দিয়ে থাকতেন। মাধব দেবনাথ অসুস্থ হলে তাকে সেবা করেন তিনি। মাধবের সঙ্গে ফোনে কথা ও মেসেজ আদান প্রদান হতো তার। বাসায় কেউ না থাকলে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন মাধব। একপর্যায়ে শারিরীক সর্ম্পক হয় তার সঙ্গে।
জবানবন্দিতে বিথী দেবনাথ বলেন, ‘সারা দেশে লকডাউন শুরু হলে মাধব কুমিল্লা চলে যায়। আমরা লালদীঘি থেকে বাসা চেঞ্জ করে টেরিবাজার চলে যাই। মাধব গ্রামে থাকা অবস্থায় আমার স্বামীর মোবাইলের ইমোতে ভিডিও কলে কথা বলতো। তার অনুরোধে তাকে আমি একটি আমার অশ্লীল ভিডিও পাঠাই। তিন মাস পর গ্রাম থেকে এসে ফের ১০-১২ দিনের জন্য আমাদের বাসায় খোরাকি হিসেবে উঠেন মাধব। আমার স্বামীর কাছে ১০ হাজার টাকা পেতেন মাধব। সেই টাকা নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় মাধবের। তাকে আমাদের বাসায় আসতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তবুও মাধব আমার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে।’
বিথী দেবনাথ আরো বলেন, আগস্টে বাড়িতে গেলে সেখানে আমার ভাবির মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করে আমার সঙ্গে কথা বলে মাধব। তখন মাধব আমাকে হুমকি দেয়। তার কাছে আমার ব্যক্তিগত ভিডিও রয়েছে। আমি যদি তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখি তাহলে সেই ভিডিও আমার স্বামীর বাড়ির লোকজনের কাছে পাঠিয়ে দিবে। তখন মাধবকে ভিডিওর বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য অনুরোধ করি এবং চট্টগ্রাম আসলে তার সঙ্গে দেখা করবো বলে জানাই।’
বিথী বলেন, ‘তবুও আমার ননদকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয় মাধব। নভেম্বরে একটি আইডি থেকে আমার স্বামীর মেসেঞ্জারে সেই ভিডিওটি পাঠায় মাধব। এ নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় আমার। পরে মাধবকে ফোন করে বাসায় আসতে বলি। ২ নভেম্বর রাতে বাসায় লোকজন কম থাকার সুযোগে বাসায় আসে মাধব। তখন প্রতিশোধ নিতে কৌশলে মাধবের হাত-পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করি।’
মিই/নসদ/১০৩০
আপনার মতামত জানানঃ