সরকার পর্যটন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধন করতে যাচ্ছে। এ আইন সংশোধন হলে পর্যটন সংস্থাগুলো নতুন করে চাপের মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইনের এই পরিবর্তন তাদের কাঙ্ক্ষিতই ছিল, তারাই এই আইনকে স্বাগত জানাতেন। কিন্তু করোনায় মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়া পর্যটন খাতের জন্য এই মুহূর্তে আইনের কড়াকড়ি এই খাতের ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বাধা দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
জানা যায়, ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩’ সংশোধনকল্পে সরকার বেশ আগে থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) বিল-২০২০’ সংসদে উত্থাপন করা হয় গত সেপ্টেম্বরে। কিন্তু সে সময় একজন সাংসদের আপত্তির মুখে আবার আইনটিকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়ে তাদের মত চাওয়া হয়। ৩ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠকে বসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি আইনটির সংশোধনীর পক্ষে রায় দিয়ে তাতে সম্পূর্ণ একমত বলে জানান দেয়। এতে করে ওই আইন প্রণয়নে আর কোন বাধা রইল না বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে কোনো অপরাধের জন্য ট্রাভেল এজেন্সিকে জরিমানার সুযোগ নেই। আইনটি পাস হলে এখানে পরিবর্তন আসবে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ৬ মাস জেল, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। আইন সংশোধনের পর থেকে এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে। এছাড়া ট্রাভেল এজেন্সির ঠিকানা পাল্টাতে হলে সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।
তবে এ আইনের সুবিধাও ভোগ করবেন পর্যটন খাতের উদ্যোক্তাদের একটি অংশ। যেসব ট্রাভেল এজেন্সি কম্পানি বিদেশে শাখা খুলতে আগ্রহী, তাদের কপাল খুলে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে অনুমোদন সাপেক্ষে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মালিকানা হস্তান্তর ও বিদেশে শাখা খোলার সুযোগ রাখা হয়েছে। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে না পারলে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে জরিমানা দিয়ে আবেদন করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে ‘যৌক্তিক কারণ’ দেখাতে পারতে হবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন না করলে ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেত।
পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন আইন করাটাকে সরকার যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা নিয়ে তাদের ততটা উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরকারে যারা আছে তাদের কাণ্ডজ্ঞান আছে বলে মনে হয় না। আমরা পুরোপুরি বন্ধ ছিলাম প্রায় ছয় মাস। প্রত্যেক মালিকের বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উচিত ছিল এখন বিধি-বিধান কিছুটা শিথিল করা। কিন্তু তা না করে উল্টো তারা আইন শক্ত করছে। নতুন আইন হলে পুলিশের দৌরাত্ম্য বাড়বে। বিনা কারণে হেনস্তার শিকার হবেন পর্যটকরা।’
অপর এক উদ্যোক্তার মতে, ‘ধনী পর্যটন ব্যবসায়ীদের বিদেশে শাখা খোলার সুযোগ দিতে এই আইন হয়েছে। এটা তাদের জন্যই দরকার। আর আমাদের জন্য দেয়া হয়েছে শাস্তি ও জরিমানার বিধান। বড় রিসোর্ট বা হোটেলগুলোতে পুলিশ যখন তখন ঢুকতে পারবে না। কিন্তু আমাদের মোটেল-রিসোর্টগুলো উন্মুক্ত। পর্যটকরা আসেন, সমস্যা কম বেশি হয়। এই আইনের কারণে এখন আমাদের ওপর চাপ বেড়ে যাবে।’
ইকো হলিডেস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আজিজুর রহমান সাজু বলেন, ‘আমরা যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছি, আমাদের জন্য ভালো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এটা হয়তো যারা ধনীশ্রেণী, বড় প্রতিষ্ঠান, তাদের জন্য ভালো হবে, আমাদের জন্য একদমই না। এতে ট্যুরিস্টরাও ভোগান্তিতে পড়বে, আমাদের উদ্যোক্তাদেরও পড়তে হবে। এটা আসলে আমাদের মনঃপুত হয়নি। দ্বিতীয়ত, জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেছে। তৃতীয়ত, এখন করোনাকালীন সময়, এই সময়টা ঠিক হয়নি। এটা হতে পারত, আরেকটু যাচাই বাছাই করে, সবার মতামত নিয়ে আরো কিছু পরে হলে হতে পারত।’
কি ধরনের ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন জিজ্ঞেস করা হলে তরুণ এই উদ্যোক্তা আরো বলেন, ‘আগে জরিমানার সুযোগ ছিল না, এখন তো সুযোগটা করে দিলেন। কাজের বেশিরভাগই অনলাইনে করা হয়। কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ই। কিন্তু এখন তো ভুল করার সুযোগ নেই। আমাদের মতো যারা আছেন, তাদেরই ভোগান্তি হবে, পর্যটকদের কথা নাই বললাম।
করোনায় বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা পাচ্ছেন। পর্যটন খাতের কী অবস্থা জানতে চাইলে আজিজুর রহমান সাজু বলেন, ‘আমরা তো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এরকম শ’তিনেক উদ্যোক্তাকে আমি চিনি। এদের কেউই কিছু পায়নি। বড়দের কথা খুব একটা বলতে পারি না। তবে তারাও যে খুব পেয়েছে, আমার সেটা মনে হয় না। আমাদের যেসব সংগঠন আছে, তারা অনেকগুলো মিটিং করেছে সরকারের সঙ্গে। চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু আমরা কিছু পাইনি।’
এসডব্লিউ/আরা/১৬১৫
আপনার মতামত জানানঃ