পৃথিবীর বাইরে বসতি স্থাপন নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন বহুদিন। চিরচেনা বাসযোগ্য এই গ্রহটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে বসবাস অনুপযুক্ত। কেউ আবার পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গলগ্রহে গিয়ে বসবাসের কথাও ভাবছেন। সে লক্ষ্যে নাসাসহ আরো কিছু বহুজাগতিক প্রতিষ্ঠান নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই হয়ত দেখা যাবে লোকজন পাড়ি জমাচ্ছেন লাল রঙের গ্রহটিতে।
তবে মঙ্গল গ্রহ ছাড়াও সৌরজগতে আরো কিছু গ্রহের উপগ্রহ রয়েছে, যেখানে বসবাস স্থাপন করা সম্ভব এবং সেখানে পানিরও বিপুল সম্ভাবণা রয়েছে। এছাড়াও সেখানে ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও নানা অণুজীবের বসবাস ইতোমধ্যেই থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। অমন কিছু গ্রহ উপগ্রহ সম্পর্কেই আজ জেনে নেয়া যাক।
গ্যানিমিড
গ্যানিমিড জুপিটারের বৃহত্তম উপগ্রহ। বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধারণা করছেন যে এখানে বিপুল জলরাশির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। বরফে ঢাকা অন্যান্য উপগ্রহগুলোর সঙ্গে এর তুলনা করলে চমৎকার কিছু বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়, যা অনুকূলে রয়েছে।
অন্যান্য উপগ্রহের ভূমির তুলনায় গ্যানিমিডের ভূমি কিছুটা পাতলা। এর ফলে এখানে খনন সুবিধার হবে। এছাড়াও সৌরজগতে এটিই একমাত্র উপগ্রহ, যার নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে।
পৃথিবীতে আমরা যেমন অরোরা দেখতে পাই, এখানেও তেমন অরোরা পাওয়া যায়। তবে এর মানে এই নয় যে এখানে অন্যান্য উপগ্রহের মতো সমুদ্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।
গ্যানিমিডের আবহাওয়ায় অক্সিজেন রয়েছে। অণুজীবদের সন্ধান পাওয়া খুব ক্ষীণ হলেও টেরাফর্মিং রুপে কিছু অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
২০১২ সালের দিকে ইউরোপভিত্তিক স্পেস এজেন্সি গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো এবং ইউরোপায় অভিযান চালাবার উদ্দেশ্যে রওনা করার বিষয়ে জানায়। ২০২২ সালের দিকে এই অভিযানটি শুরু হবে এবং গ্যানিমিডে পৌঁছাতে অন্তত এক যুগ সময় লাগবে। জুপিটারের তিনটে উপগ্রহের প্রতিই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আগ্রহ রয়েছে। তবে এদের মাঝে গ্যানিমিডই তাদের প্রথম পছন্দ।
ইউরোপা
মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী একটি উপগ্রহই শুধু নয় ইউরোপা, ইতোমধ্যেই সেখানে হয়ত প্রাণের বিকাশ হয়েছে। জুপিটার গ্রহের অনেকগুলো উপগ্রহের মাঝে ইউরোপা অন্যতম। এখানে বরফের পুরু আস্তরণ রয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই পুরু আস্তরণের নিচে হয়ত বিশাল সমুদ্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও চারপাশে থাকা পাথুরে জমিন অণুজীবের বাস করার জন্য অন্যতম অণুঘটক হিসেবেও কাজ করতে পারে বলে ধারণা তাদের।
যেহেতু এখানে সমুদ্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে, তাই আমাদের গ্রহের অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন চক্রের মতো এখানে বসবাস করার জন্য পানির বিপুল সন্ধান পাওয়া যাবে বলে নাসার বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস।
টাইটান
বিজ্ঞানীদের অনেকেরই ধারণা, শনির উপগ্রহ টাইটান মানুষের বসবাসের জন্য অন্যতম সেরা বসতি হতে পারে। কেউ কেউ তো মঙ্গলের পাশাপাশি এটিকেও তাদের তালিকায় রাখছেন রীতিমতো। শ্বাস নেয়ার জন্য কিছুটা সমস্যা এখানে দেখা দিতে পারে, তবে প্রেসারাইজড স্পেস স্যুট পরে চলাফেরা করার মতো খারাপ অবস্থা এখানে নেই।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, কিছুদিন এখানে থাকলে আবহাওয়ার সঙ্গে মানুষ পরিচিত হয়ে যাবে এবং তখন আর বাঁচার জন্য যুদ্ধ করতে হবে না। তবে মাধ্যাকর্ষণ বলের তারতম্যের কারণে হাঁটাচলার গতি একটু ধীর হয়ে যাবে। কৃত্রিম আলোর সাহায্যে খাবার প্রস্তুত করতে হবে। এখানে মেঘের ঢাকা ছায়াময় অবস্থা একটু বেশি থাকার কারণে সূর্যের আলো পৃথিবীতে যতটা পৌছায়, ততটা পৌঁছাতে পারে না।
পানির চাইতে মিথেনের পরিমাণ বেশি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পানির পরিবর্তে এখানে মিথেন মানুষের প্রধান সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। মিথেনে ভরপুর প্রচুর হ্রদ ও নদী টাইটানে রয়েছে।
এনসেলাডাস
শনি গ্রহের একটি অন্যতম উপগ্রহ এনসেলাডাস। কোনো কোনো বিজ্ঞানী ও গবেষক এই উপগ্রহটি নিয়ে অনেক আশাবাদী। তাদের ধারণা, মানুষ এখানে বসতি স্থাপন করতে পারে। ইতোমধ্যেই এখানে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
কাসিনি স্পেসক্রাফটের সাহায্যে এখানকার আবহাওয়া পরীক্ষা করে পানি, নাইট্রোজেন এবং জৈব কার্বনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই উপাদানগুলোই মানুষের বসতি স্থাপনের জন্য অন্যতম অণুঘটক হিসেবে কাজ করবে। এখানে বরফের ওপর প্লুমসের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই প্লুমসগুলোর জন্য এনসেলাডাস নামক উপগ্রহটিকে “বাঘের মতো ডোরাকাটা” বলে পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে। কয়লা খনি স্থাপন করা হলে জ্বালানি প্রাপ্তিতেও বিশেষ কোনো সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ক্যালিস্টো
জুপিটারের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ক্যালিস্টোর আকার প্রায় বুধের সমান। এখানেও পানি প্রাপ্তির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যালিস্টোতে বিশাল বিশাল বরফের চাই রয়েছে।
এছাড়াও এর আবহাওয়ায় অতি পাতলা স্তরের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিদ্যমান। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যানুসারে জানা গিয়েছে যে, এখানকার আবহাওয়ায় অক্সিজেনের উপস্থিতিও থাকতে পারে। তবে এজন্য আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। জুপিটার থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার কারণে এই গ্রহে রেডিয়েশন অত্যন্ত স্বল্প মাত্রায় বিদ্যমান।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ