আমেরিকাসহ পশ্চিমী দুনিয়ার হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে পুতিন সোমবার রাতে ইউক্রনের দু’টি অঞ্চল দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়)-কে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করেন। তার এই পদক্ষেপের ফলে পশ্চিমী-সমর্থিত ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্ঘাত শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে টেলিভিশন ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব ইউক্রেন একসময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। তিনি আত্মবিশ্বাসী, রাশিয়ার জনগণ তাঁর এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাবে। আর স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পরই দোনেৎস্ক এলাকায় ট্যাংক দেখা গেছে।
এর মধ্যেই পরমাণু অস্ত্রের মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। সমর্থন পেয়েছে পার্লামেন্টের। যুদ্ধ তাই হয়ে উঠেছে অবধারিত।
পুতিনকে সমর্থন পার্লামেন্টের
মাত্র একদিন আগে দুই রুশপন্থী অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুগানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করেছে রাশিয়া। আর মঙ্গলবার সেখানে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা সেরে ফেললেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা দেশের বাইরে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তে সমর্থন করলেন প্রেসিডেন্টকে। ১৫৩ সেনেটরের সবাই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত।
এদিকে, দুই রুশপন্থী সমর্থিত অঞ্চলে সেনা পাঠানো শুরু হলে যুদ্ধ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
পরমাণু অস্ত্রের মহড়া শুরু
পুতিনকে বিদেশে সেনা ব্যবহারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে রাশিয়ার পার্লামেন্ট। তার পরই বেলারুশের নেতা অ্যালেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে পাশে নিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় যৌথ পরমাণু মহড়া দেখলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পানি ও স্থল থেকে ছোড়া পরমাণু অস্ত্র আঘাত হানছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের অভিমুখ কি ইউক্রেনের দিকে? ক্রমেই চড়ছে আশঙ্কার পারদ।
পরমাণু অস্ত্রের মহড়া শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। যে মহড়ার তত্ত্বাবধানে খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার পার্লামেন্ট বিদেশের মাটিতে রাশিয়ার সৈন্য ব্যবহারে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরই এই ধরনের মহড়া ওই এলাকায় যুদ্ধ উত্তেজনা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তা হলে ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরোদস্তুর হামলা কি এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা? না কি, তারা পক্ষান্তরে চাপ বাড়াতে চাইছে আন্তর্জাতিক মহলের উপর?
বেলারুশের নেতা অ্যালেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে পাশে নিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় যৌথ পরমাণু মহড়া দেখলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জাহাজ, বিমান ও ডুবোজাহাজ থেকে পরমাণু অস্ত্রের মহড়া চলছে। পানি ও স্থল থেকে নির্ভুল দক্ষতায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে সফল হয়েছে তা।
মহড়া শেষে ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের মহড়ায় ‘হাইপারসনিক’ এবং ‘ক্রুজ’ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষ জায়গা থেকে গোটা মহড়ায় চোখ রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন ও বেলারুশের নেতা লুকাশেঙ্কো। মহড়া শেষে সেনা আধিকারিকদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ মনে করছে, পরমাণু অস্ত্রের মহড়ার জন্য এই সময় বেছে নেওয়ার একটি ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে ক্রেমলিনের। তাদের মত, মহড়ার মাধ্যমে মস্কো পশ্চিমী দুনিয়াকে বার্তা দিল, যাতে তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
এমন একটি সময় এই মহড়া হল যখন, রাশিয়ার উপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। হোয়াইট হাইসে দাঁড়িয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার উপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করছেন। কিন্তু তাতে কি রাশিয়াকে নিরস্ত করা যাবে?
জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের। সেখানেও লাভরভ অভিযোগ করেছেন, এই এলাকার উপর রাশিয়ার আইনি অধিকার খর্ব করার চেষ্টা চলছে। যা শুধু ইউরোপ মহাদেশই নয়, গোটা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পরিপন্থী।
কেন ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাল রাশিয়া?
যখন ২০১৪ সালে রাশিয়া প্রথমবার ইউক্রেনে প্রবেশ করে, তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন সমর্থিত বিদ্রোহীরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বেশ বড় একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর থেকেই তারা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছে।
যুদ্ধ বন্ধে একটি আন্তর্জাতিক মিনস্ক শান্তি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু লড়াই তাতে থামেনি। আর এই কারণেই রাশিয়ার নেতা বলছেন, ওই অঞ্চলে তিনি তথাকথিত শান্তি রক্ষী পাঠাচ্ছেন।
তার এই বক্তব্যকে ‘বাজে কথা’ হিসাবে দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। তারা মনে করছে, মস্কো পুরো ইউক্রেনের ওপর হামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
খবর পাওয়া যাচ্ছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় ট্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইউক্রেন সীমান্তের ১৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রাশিয়ার সৈন্য অবস্থান নিয়েছে।
রাশিয়া কতদূর যেতে পারে?
ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো শুধুমাত্র পূর্ব ইউক্রেনের শান্তি চুক্তি ভেঙ্গে দিয়ে সেখানেই থেমে যেতে পারেন। তারা দাবি করেছে, ইউক্রেনে রাশিয়া কোন হামলা করছে না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, রাশিয়া আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আমাদের বিশ্বাস, তারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ লক্ষ্য করে এগোচ্ছে, যেখানে দুই কোটি ৮০ লাখ মানুষ বসবাস করে।
এই সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। ধারণা করা হয়, ইউক্রেনের পূর্ব, উত্তর আর দক্ষিণ দিক থেকে হামলা করে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে পারে রাশিয়া।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে রাশিয়াকেও চরম বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে।
আপনার মতামত জানানঃ