ফিলিস্তিনি সত্তাকে স্বীকার করা হলেও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। আমরা কোনো দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চাই না। আমরা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি এই দুই সত্তার ভিত্তিতে সমাধান করতে চাই। খবর মিডলইস্ট মনিটরের।
রবিবার জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত এক নিরাপত্তা সম্মেলন শেষে এক সংবাদ বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন বেনি গান্টজ। বেনি গান্টজ আরও বলেন, দুই সত্তাভিত্তিক সমাধান অনুসারে আমরা ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব ও স্বশাসনকে স্বীকার করি। কিন্তু, ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জাতির সমন্বয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে বটে, কিন্তু কোনো পূর্ণাঙ্গ বা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, দেখুন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে বলা হয়েছিল যে ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের সীমানা মেনে নিতে হবে। কিন্তু এর মাধ্যমে মূলত একটি বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছিল এবং এ কারণেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক কাঠামো অনুসারে কোনো সমাধান আসেনি। এ জন্যই আমরা দুই সত্তাভিত্তিক সমাধান চাই, যাতে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা দুটিই নিশ্চিত হয়।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। ওই সময় থেকে ইসরায়েলি নাগরিকরা পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন শুরু করে। দখলকৃত ভূমিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ হলেও এখনো পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ করে আসছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জাতির সমন্বয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে বটে, কিন্তু কোনো পূর্ণাঙ্গ বা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না।
১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম তীর থেকে ধীরে ধীরে ইহুদি বসতি সরিয়ে নিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের কথা থাকলেও ইসরায়েল এই বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্তু পশ্চিম তীরে নতুন নতুন অবৈধ বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে জেরুসালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২৫৬টি বসতিতে প্রায় সাত লাখ ইসরায়েলি ইহুদি বাস করছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নিষেদ্ধের কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। এতে গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠীকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাতারে চলে এসেছে।
এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাতারে চলে আসবে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ গাজা-ভিত্তিক হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে।
এর আগে ফিলিস্তিনের খ্যাতনামা ছয়টি মানবাধিকার সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের তকমা দিয়ে একটি সামরিক আদেশ জারি করে ইসরায়েল। এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
ইসরায়েলের এমন নির্দেশ জারির পর ওই ৬টি সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘেরাও অভিযান পরিচালনা করতে পারবে ইসরায়েলি সেনারা। পারবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন ফিলিস্তিনিরা।
এদিকে ফিলিস্তিনি এলাকাগুলোতে পুলিশের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল। এমনিতেই দখলদাররা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তল্লাশি-অভিযানে পুলিশ বাহিনীকে নজিরবিহীন ক্ষমতা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার তাদের নতুন উদ্যোগ কার্যকর হলে, কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালাতে পারবে ইসরায়েলি পুলিশ।
ইসরায়েলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতাবৃদ্ধির একটি বিলে অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলি পুলিশ যদি মনে করে, তারা কোনো বাড়িতে ঢুকলে গুরুতর অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজনকে আটক অথবা এ সংক্রান্ত প্রমাণ জোগাড় করতে পারবে, তাহলে সেখানে প্রবেশে আদালতের পূর্বঅনুমতির দরকার হবে না।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বিলটি ইসরায়েলি পার্লামেন্টে তোলা হবে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন পেলে সেটি আইনে পরিণত করা হবে।
এদিকে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে ইসরায়েলের নীতি, আইন, আচরণ ‘আ্যাপারথাইড’ অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের সমতুল্য বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নতুন এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েল এমন একটি নির্যাতনমূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে যা প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর কর্তৃত্ব ফলানো যায়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের ইহুদিদের স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য বজায় রাখতে ইসরায়েল রাষ্ট্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে।’
আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের ‘অ্যাপারথাইড’ অর্থাৎ নির্যাতন এবং বৈষম্যমূলক আইনের মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীর ওপর অন্য জনগোষ্ঠীর কর্তৃত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা মানবতা-বিরোধী অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৭
আপনার মতামত জানানঃ