মৌমাছি যদি আর মধু সংগ্রহ না করে, তবে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ প্রজাতির ফল, ফুল ও সবজি আর নতুন করে জন্ম নেবে না! নতুন করে জন্ম না নিলে একটা সময় পর আমরা নতুন কোন বীজ পাবো না। আর বীজ না পেলে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে অনেক প্রজাতির গাছ বিলিন হয়ে যাবে! দেখা দিবে অক্সিজেন সংকট। পুরা ফুড চেইনের বিশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডল।
বিজ্ঞানীদের ধারণা ৪ বছরের মধ্যে মারা যাবে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ। পরিবেশের ভারসাম্য পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, খাবারের সংকট দেখা দিবে। একসময় হয়তো আমাদের পৃথিবী আর বসবাস উপযোগী থাকবে না। মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহের মতো মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
মূলত ফুলের মধু আনতে গিয়ে মৌমাছির গায়ে জড়িয়ে যায় রেণু। সেই রেণু অন্য ফুলে ছড়িয়ে পড়ে মৌমাছি বা বাতাসের মাধ্যমে। ঘটে পরাগায়ন। রক্ষা পায় প্রকৃতির ভারসাম্য। মৌমাছির পরিশ্রমের ফল পুরোটাই ভোগ করে মানুষ ও পরিবেশ।
ফুলের মধু সংগ্রহ করা হাজার বছরের স্বভাব মৌমাছির। তবে এই স্বাভাবিকতার মধ্যেই সম্প্রতি দেখা যায় ছন্দপতন। সম্প্রতি মধুর বদলে মিষ্টি খাচ্ছে মৌমাছি। এ দৃশ্য যেন ভাবনার জন্ম দেয়। কেন? কি কারণে এমন হচ্ছে?
আজকাল মধুময় ফুল ছাড়াও অন্যত্রও দেখা যায় মৌমাছিকে। শহর, উপশহর বা গ্রামেও মিষ্টির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের যেমন ভিড় থাকে, তেমনি মৌমাছিদেরও দেখা মেলে দিনভর।
মৌমাছিরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে মিষ্টির ওপর। এ নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে নানান প্রশ্ন। মিষ্টির মান বা দোকানদারের কারসাজি বলে অশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
প্রকৃতিপ্রেমী ও প্রাণিবিজ্ঞান সংশ্লিষ্টদের যুক্তি, শহরের প্রকৃতিতে ফুলের পরিমাণ কম। তাই হয়তো ফুল না পেয়ে মিষ্টির দোকানে আসছে মৌমাছি। আগেও মিষ্টির দোকানে মৌমাছি যেত। তবে এখন একটু বেশিই দেখা যায়।
আর এই সুযোগে মৌয়ালদের মাধ্যমে মৌমাছি সংগৃহ করে শহরের মিষ্টির দোকানিরা। জীবন্ত মৌমাছি গ্লাস বন্দী মিষ্টির উপর ছেড়ে দিয়ে তারা মিষ্টির স্বাদকে প্রমাণের চেষ্টা করে।
তবে আসল সত্যিটা কী? বিষয়টি জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে। তবে খাদ্যসংকট দেখা দিলে তখন মৌমাছি খাবার খুঁজতে চিনি জাতীয় দ্রব্যের কাছে যায়। এটা প্রাকৃতিক। তাই খাদ্যের তাগিদেই ওরা মিষ্টির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, যখন মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য খাঁচা স্থাপন করে, তখন প্রথম দিকে তারাও কিন্তু মিষ্টির শিরা বা চিনি ব্যবহার করে। মৌমাছি খুবই বুদ্ধিদীপ্ত পতঙ্গ। ফুল এবং মধু সংগ্রহের প্রাকৃতিক উৎস কমে যাওয়ায় মৌমাছি হাটবাজার, মিষ্টির দোকানে মধু সংগ্রহের জন্য যেতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস বলেন, মৌমাছি ফুলের মধ্যে থেকে নেক্টার নামক এক প্রকার জাতীয় তরল পদার্থ সংগ্রহ করে।
পরে তা মৌচাকে থাকা মৌমাছিদের মুখে দিয়ে দেয়। এরপর ফুলের রসের সঙ্গে তাদের শরীর থেকে এক ধরনের এনজাইম যুক্ত করে এবং মৌচাকে তা জমা রাখে। এভাবে জমাকৃত সে বিশেষ রস কিছুদিন পর গাঢ় মধুতে পরিণত হয়।
তিনি আরো বলেন, মৌমাছি সাধারণ দুই ধরনের হয়ে থাকে। চাষের মৌমাছি এবং গাছ মৌমাছি। এর মধ্যে গাছ মৌমাছি আকারে বড়। এরা গাছের মগডালে বাসা করে। সাধারণ মিষ্টি, গুড়, ফলের দোকানে এই গাছ মৌমাছি বেশি দেখা যায়।
মৌচাকের আশেপাশে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুল, পরাগ রেনুর অভাব দেয়া দেয় তখন তারা নেক্টার জাতীয় পদার্থ সংগ্রহে এসব দোকানে হানা দেয়। জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, ফুলের অভাব এসব কারণে তারা মূলত মিষ্টির দোকানে ভিড় জমায়।
এসডব্লিউ/এসএস/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ