আসনের অর্ধেক নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত সিট ততজন যাত্রী নিয়ে চলতে পারবে বাস, তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা যাবে না। ভাড়াও বাড়বে না। পাশাপাশি করোনার টিকার সনদ ছাড়া চালক ও শ্রমিকরা বাস চালাতে পারবেন না বলে যে শর্ত রয়েছে, তা বহাল থাকছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ দাবি করেন।
কিছুদিন আগে হাসপাতালে যেখানে রোগীর সংখ্যা ছিল দুইশ থেকে আড়াইশ, সেখানে এখন রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে ১৭০ শতাংশ।
প্রায় তিন মাস যাবত শনাক্তের হার তিন শতাংশের কম থাকলেও এখন সেটি প্রায় ১২ শতাংশ। এমন অবস্থায় সবাইকে টিকা নেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর জোর দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের কম দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। আগামী একমাসের মাসের মধ্যে চার কোটি টিকা দেবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এজন্য টিকা দেবার নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশে গতকাল থেকে কিছু বিধি-নিষেধ কার্যকর হচ্ছে। গত ১০ই জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।
কিন্তু গণ-পরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সেটি গতকাল কার্যকর হয়নি। বুধবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে বাস মালিকদের এক বৈঠকের পর জানানো হয় আগামী শনিবার থেকে এটি কার্যকর করা হবে।
এদিকে, পরিবহন মালিকরা বলছেন, তাদের দাবি মেনে নিয়ে আসনের অর্ধেক নয়, যত সিট ততজন যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
পরিবহন মালিক সমিতি বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত সিট ততজন যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চালালে পরিবহন সঙ্কট হতে পারে।
এ আশঙ্কায় সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল যত আসন তত যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দিতে। সরকার প্রস্তাবটি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করছেন। শনিবারের আগেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এর আগে বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পুলিশ ও ভোক্তা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছিলেন, ভাড়া না বাড়িয়ে আগামী শনিবার থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলবে।
বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী, সবার জন্য বাসে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাত্রার শুরুতে ও শেষে বাস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। যাত্রী উঠানামা সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন ও বিআরটিএ’র জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, গণপরিবহনে চালক, শ্রমিক, যাত্রী সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। করোনার টিকা না নেওয়া চালক শ্রমিকরা বাস চালাতে পারবেন না।
প্রজ্ঞাপন জারির পর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বলেন, ‘৯৫ ভাগ চালক শ্রমিক এখনও টিকা পাননি বা নেননি। তাহলে বাস কে চালাবে? এ সিদ্ধান্তের ফলে গণপরিবহন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
খন্দকার এনায়েত বলেন, ‘গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চালক শ্রমিকদের কীভাবে দ্রুততম সময়ে টিকা দেওয়া যায়, তাতে জোর দেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ চলছে। চালক শ্রমিকরা যেনো পরিচয়পত্র অথবা লাইসেন্স দেখিয়ে টিকা নিতে পারেন; সেই প্রস্তাব করা হয়েছে।’
গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রেখে চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবারের বৈঠকে মালিকরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সব খোলা রেখে অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চললে তীব্র পরিবহন সঙ্কট হবে- এ যুক্তি তুলে ধরে তারা সরকারি নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার দাবি জানায়।
অন্যথায় চালক শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দিতে পারেন বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেছিলেন মালিকরা। তখন বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, পরিবহন মালিকদের দাবি যৌক্তিক। তাই আসন অর্ধেক খালি রাখার শর্ত শিথিল করতে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়ক পরিবহন সচিব মালিকদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা মৌখিকভাবে জানান।
খন্দকার এনায়েত এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ‘সব খোলা রেখে বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে, পরিবহন সঙ্কটে ব্যাপক জনভোগান্তি হবে। এ বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়েছিল। সরকার তা বিবেচনা করেছে। যত সিট ততজন যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।’
২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ রোধে ‘লকডাউন’ এর কারণে ২৫ মার্চ থেকে ৬৮ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ওই বছরের ১ জুন অর্ধেক আসন খালি রাখার শর্তে বাস চালু হয়। তখন ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
পরে মালিকদের দাবিতে ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে ‘যত সিট তত যাত্রী’ নিয়মে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় দুই মাস আগে বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে অর্ধেক আসন খালি রেখে চলতে হলে আবার ভাড়া বাড়াতে হত। করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় অসম্ভব। তাই আসনের সমান সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মালিকরা। সরকার তা মেনে নিয়েছে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ