প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রাণী। তেমনি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অতিকায় এক প্রাণী ম্যামথ। ম্যামুথুস গণের সব প্রজাতিকেই ম্যামথ ডাকা হয়। তবে ম্যামথদের সবশেষ টিকে থাকা প্রজাতি ছিল লোমশ ম্যামথ। বর্তমান হাতিদের পূর্বপুরুষ ধরা হয় এই ম্যামথ প্রজাতিকে।
আকারে তারা অবশ্য ছিল এই হাতিদের চেয়ে একটু বড়। এদের ছিল বিশাল দাঁত, লোমে ভরা দেহ আর বড় শুঁড়। অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘আইস এজ’ যারা দেখেছেন, তারা হয়তো ইতোমধ্যে চিনে ফেলেছেন সিনেমায় ‘ম্যানি’ নামের বিশাল দাঁতের অধিকারী লোমশ এই প্রাণীকে।
বরফ যুগের এই প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে চার হাজার বছর আগে। মনে করা হয়, এরা আরো পঞ্চাশ লক্ষ বছর আগে থেকেই ছিল পৃথিবীতে। আদিম মানুষদের আঁকা গুহাচিত্রেও দেখা গেছে এই ম্যামথদের। কিন্তু কেন সদলবলে হারিয়ে গেল এরা? অত্যধিক শিকার? জলবায়ুর পরিবর্তন? নাকি, অন্যকিছু?
তবে ঠিক কী কারণে ম্যামথ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল, তা নিয়ে রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। কেউ কেউ মনে করেন, মানুষের অত্যধিক শিকারের কারণেই হারিয়ে গেছে তারা। একেকটি ম্যামথ শিকারের মাধ্যমে প্রচুর মাংস পাওয়া যেত।
মানুষ তখন মাংসের পাশাপাশি ম্যামথদের হাড় অস্ত্র তৈরিতে এবং দাঁত বিভিন্ন অলঙ্কার তৈরির কাজে ব্যবহার করত। তবে তাদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে শিকার একটি কারণ হলেও তা কখনোই একমাত্র বা প্রধান কারণ ছিল না। কেননা, বহু জায়গায় মানুষের পদচারণা পড়ার আগেই ম্যামথ বিলুপ্ত হয়েছিল।
গবেষকদের একটি দল মনে করেন, বরফযুগের শেষে বিশাল তৃণভূমি ক্রমশ বনে ঢেকে যেতে থাকলে এরা খাদ্যাভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এমন বিচ্ছিন্নতা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, পৃথিবীর তাপমাত্রা তখন ক্রমশ বাড়ছিল। সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে ও বিশাল বিশাল তৃণভূমি বনে পরিণত হয়ে যাওয়ায় তাদের খাবারের অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছিল।
ম্যামথরা যেহেতু ছিল বরফযুগের প্রাণী, তাই সে সময়ের হিমশীতল পরিবেশে গায়ে লোম ও চর্বির আধিক্য থাকায় তারা খুব সহজেই মানিয়ে নিয়েছিল নিজেদের। কিন্তু বরফযুগের অবসান হওয়ায় ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তাদের অবসানও নিশ্চিত হয়ে যায়। তারা পরিবর্তিত তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারেনি। পর্যাপ্ত খাবার কিংবা সুপেয় পানির অভাব, সেই সাথে ক্রমাগত শিকার হয়তো তাদের বিলুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
এই বিশালাকার প্রাণীর বিলুপ্তির পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে আরো কিছু সম্ভাবনার কথা বলা যেতে পারে। যেমন, হঠাৎই নতুন কোনো রোগজীবাণুর আক্রমণ, মহামারি বা বড় কোনো দুর্যোগে তারা প্রাণ হারিয়েছে।
এমনও হতে পারে, ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় জিনবৈচিত্র্য হ্রাস পেয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তারা। কিন্তু, এসবই শুধু অনুমান। বাস্তবে কোনোটারই পক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ নেই।
কাজেই আসলেই ঠিক কী কারণে হারিয়ে গেছে ম্যামথরা, তা মোটামুটি অন্ধকারাচ্ছন্নই রয়ে গেছে এখনও।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ