বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের আওতাভুক্ত ১৩টি জেলার ৯৬টি থানাকে সংযুক্ত করে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক অপারেশন্স কন্ট্রোল রুম অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার। পুলিশি সেবা দ্রুত জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে থানাগুলোকে এই কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে থানার ডিউটি অফিসার, হাজতখানা ও সেন্ট্রি বক্সের কার্যক্রম সিসিটিভির মাধ্যমে সরাসরি মনিটর করা যাবে। রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এই কন্ট্রোল রুম।
পুলিশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে থানায় সিসিটিভি, পুলিশের গাড়িতে অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং ব্যবস্থা এবং পুলিশের শরীরে ভিডিও ক্যামেরা সংযুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশই পুলিশি অপরাধ শনাক্ত এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ পুলিশ দেরিতে হলেও ধাপে ধাপে সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
কন্ট্রোল রুম উদ্বোধনকালে জনগণের প্রতি নির্দয় আচরণ থেকে বিরত থাকতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। নির্দয় আচরণ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিজ বাহিনীর কর্মকর্তাদের এ সময় নির্দেশ দেন তিনি। আইজিপি বলেন, জনগণের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও নির্যাতন করার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়, এ কথা উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, এর প্রমাণ করোনাকালে পুলিশ পেয়েছে।
আইজিপি বলেন, কোনো ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ না করতে হয়, সে জন্য বর্তমান সরকার সব সরকারি পেশাজীবীর সুযোগ-সুবিধা ও বেতন- ভাতা অনেক বাড়িয়েছে। তাই, আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ জীবন যাপন করতে হবে। পুলিশের কোনো সদস্য দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না। ২ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার কন্ট্রোল রুম উদ্বোধনকালে ঢাকা রেঞ্জের ১৩টি জেলার পুলিশ সুপার ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় এসব কথা বলেন আইজিপি। এ সময় তিনি ঢাকা রেঞ্জের ইনোভেটিভ ও বিশেষ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে
পুলিশপ্রধান বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। আমরা প্রযুক্তিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলব। ফলে পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা আসবে, দুর্নীতি কমবে। মানুষ সহজে পুলিশের সেবা পাবে। পুলিশপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পুলিশকে জনবান্ধব, মানবিক পুলিশ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার পুলিশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তোলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বিট পুলিশিংয়ের ব্যাপকতা ও গুরুত্ব উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সারা দেশকে ৬ হাজার ৯১২টি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশিং চালু করা হয়েছে। এর ফলে বিট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ওই এলাকার প্রতিটি থানা সম্পর্কে জানতে পারবে, তাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে পারবে। ফলে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও আইনি সেবা প্রদান করা সহজ হবে।
বর্তমান কল্যাণব্যবস্থার বাইরে গিয়ে চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। জেলা হাসপাতাল আধুনিকায়নের আওতায় আনা হচ্ছে। আটটি বিভাগে ক্যাডেট কলেজের আদলে উন্নতমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হবে।
ড. আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে ধনী দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করছেন। উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হওয়ার জন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। নিজের টার্গেট সেট করতে হবে। অধস্তনদের তৈরি করতে হবে। সংগঠনকে ভালোবাসতে হবে, সম্মান নিয়ে চাকরি করতে হবে।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১০২০
আপনার মতামত জানানঃ