সৌরজগত নিয়ে মানুষের জানার শেষ নেই। অসীম এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সিংহভাগই এখনও অজানা সকলের কাছেই! তবে, দিন দিন মানুষের জানার ইচ্ছে এবং উন্নত প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই ক্রমশ একটু একটু করে উন্মোচিত হচ্ছে মহাকাশের রহস্য।
এবার, সেই রহস্যের সূত্র ধরেই মনে করা হচ্ছে যে, সৌরজগতের “তৃতীয় অঞ্চলে” (থার্ড জোন) পৃথিবীর একটি “যমজ গ্রহ” লুকিয়ে রয়েছে।
এনুয়্যাল রিভিউ অব এস্ট্রনমি ও এস্ট্রফিজিক্স-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, মহাকাশের থার্ড জোনেই রয়েছে পৃথিবীর একটি “যমজ গ্রহ”।
প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরেই সৌরজগতের নবম গ্রহের সন্ধান চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই সন্ধানের ভিত্তিতেই নতুন এই তথ্য হাতে পেয়েছেন তাঁরা।
“থার্ড জোন” হল মহাকাশের একটি অঞ্চল, যা নেপচুন ছাড়িয়ে আরও সুদূর মহাকাশে বিস্তৃত। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই অঞ্চলেরই কোথাও পৃথিবীর “যমজ গ্রহ” থাকতে পারে।
পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন যে, এই গ্রহটি পৃথিবী এবং সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির দুই বিশেষজ্ঞ মাইক ব্রাউন এবং কনস্ট্যান্টিন ব্যাটিগিন এই নিয়ে গবেষণা করছেন।
একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাউন দাবি করেছেন যে, এই গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৬ গুণ বড় হতে পারে। যদিও গ্রহটি পৃথিবীর মতো পাথুরে নাকি নেপচুনের মতো ভারী গ্যাসের মিশ্রণ, তা নিয়ে এখনও স্পষ্টকিছু জানা যায়নি।
ট্র্যাপিস্ট-১
আমাদের এই পৃথিবী মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে অত্যন্ত নগণ্য। কিন্তু এই পৃথিবীর বিশেষত্ব আমাদের জানা যে কোন গ্রহকে ছাড়িয়ে যাবে সহজেই। কারণ এখানে রয়েছে ৭৫০কোটি বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষের বসবাস। রয়েছে জানা অজানা অগণিত বিচিত্র প্রাণী যাদের মধ্যে রয়েছে এক কোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে অতিকায় নীল তিমি।
পৃথিবীতে কি এমন জিনিস রয়েছে যার কারণে এখানে এত প্রাণের সমাহার ঘটেছে যা অন্য কোন গ্রহে নেই? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে পানি। বেশিরভাগ বিজ্ঞানিরাই মনে করেন পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের শুরু এই পানি থেকেই হয়েছিল। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, পৃথিবীতে পানি না থাকলে কোন প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
পৃথিবী সূর্য থেকে এই নির্দিষ্ট দূরত্বে তথা হ্যাবিট্যাবল জোনে অবস্থান করার কারণেই পৃথিবীর বায়ূমন্ডল খুব বেশি উত্তপ্ত বা শীতল নয়। ফলে এর বায়ূমন্ডল এবং আবহাওয়া পানির জন্যে উপযোগী হয়েছে এবং আবির্ভাব ঘটেছে অগণিত বিচিত্র সব প্রাণের।
এখন অবশ্যই প্রশ্ন জাগবে যে, তাহলে কি আমাদের সৌরমন্ডলের বাইরে অন্য কোন গ্যালাক্সিতে এমন গ্রহ থাকতে পারে না, যা তার সূর্য থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে হ্যাবিট্যাবল জোনে অবস্থান করছে? এর উত্তর হচ্ছে হ্যা। নাসার বিজ্ঞানিরা এমন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে যা পৃথিবীর মত হ্যাবিট্যাবল জোনে অবস্থান করছে।
নাসার আবিস্কৃত এই নক্ষত্রের নাম ট্র্যাপিস্ট-১ যা আমাদের সূর্য থেকে ৩৯.৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। এই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে সাতটি গ্রহ যা সূর্য বাদে আবিস্কৃত অন্য যে কোন নক্ষত্রের গ্রহের সংখ্যা থেকে বেশি। নাসার অনুসন্ধান অনুযায়ী কমপক্ষে তিনটি এবং সর্বোচ্চ পাঁচটি গ্রহ পৃথিবীর মত হ্যাবিট্যাবল জোনে অবস্থান করছে।
ট্রাপিস্ট-১ আমাদের সূর্যের তুলনায় কম উত্তপ্ত এবং এর সবগুলো গ্রহ সূর্য থেকে বুধ এর দূরত্বের সমান দূরত্বে অবস্থান করছে। এই গ্রহ গুলোতে পৃথিবীর মত আহ্নিক গতি নেই অর্থাৎ দিন রাতের কোন আবর্তন নেই। গ্রহগুলোর একপাশ সবসময় আলোকিত থাকে এবং অন্য পাশ সবসময় অন্ধকার থাকে।
কেপলার-১৬৪৯সি
সৌরজগতের বাইরে গ্রহ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। প্রাণ ধারণের উপযোগী গ্রহ শনাক্ত করা আরও কঠিন। এমন কাজের জন্যই কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। এর এত ক্ষমতা ছিল যে, সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহের উপগ্রহও খুঁজে পেয়েছিল।
আশার কথা, বিজ্ঞানীরা বলছেন কেপলার টেলিস্কোপটি কার্যক্ষমতা হারানোর আগেই আমাদের দূর মহাজগতে ভাসমান একটি ‘দ্বিতীয় পৃথিবী’র খোঁজ দিয়ে গেছে!
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, সৌরজগতের বাইরে থাকা কেপলার-১৬৪৯সি নামের এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে তিনশ’ আলোকবর্ষ দূরে। বিজ্ঞানীরা জানান, কেপলার স্পেস টেলিস্কোপটি সৌরজগতের বাইরের হাজারো গ্রহের সন্ধান দিয়েছে।
তবে কেপলার-১৬৪৯সি গ্রহটির সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে আমাদের এই পৃথিবীর সঙ্গে। গ্রহটি এর নক্ষত্রের যে প্রাণ ধারণের উপযোগী অঞ্চল রয়েছে সে সীমার মধ্যেই আছে। এর বুকে তরল পানিও থাকতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
কেপলার-১৬৪৯সি গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে আকারে সামান্য বড়। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে এটি নিজের নক্ষত্র থেকে অন্তত ৭৫ শতাংশ আলো পায়। এর মানে ওই গ্রহপৃষ্ঠের তাপামাত্রা পৃথিবীর কাছাকাছি, যা প্রাণ ধারণের উপযোগী বলেই আভাস দেয়!
২০১৮ সালেই কেপলার টেলিস্কোপটি জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় চির ঘুমন্ত অবস্থায় চলে যায়। তবে এর আগে টেলিস্কোপটি যেসব ছবি পাঠিয়েছিল, সেগুলো বিশ্নেষণ করেই বিজ্ঞানীরা এ গ্রহের সন্ধান পান।
নাসার বিজ্ঞানী থমাস জার্বুসেন বলেন, ‘সৌরজগতের বাইরে ওই দূর বিশ্ব আরও বেশি যেন আশা জাগানিয়া। লাখ লাখ নক্ষত্রের ভিড়ে যেন কোনো দ্বিতীয় পৃথিবী ভেসে বেড়াচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০৩
আপনার মতামত জানানঃ