করোনার নতুন রূপ ওমিক্রনের প্রভাব এরই মধ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ওমিক্রন ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে নেয়া হচ্ছে কঠোর ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। এরই মধ্যে করোনার আরও একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা-কল্পনা। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম ‘ডেলমিক্রন’। যদিও এর সত্যতা নিয়ে এখনও দ্বিধাবিভক্ত বিশেষজ্ঞরা।
ডেলমিক্রন হল কোভিডের যুগ্ম ভ্যারিয়েন্ট, যা পশ্চিমে ক্রমবর্ধমানভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। করোনার ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সমন্বয়ে এই নামটি তৈরি করা হয়েছে। কারণ বর্তমানে এই দু’টি রূপই সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
ভারতের কোভিডের স্টেট গভর্নমেন্টের টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য শশাঙ্ক যোশির মতানুসারে, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা ও ওমিক্রনের যুগ্ম রূপ ডেলমিক্রন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এই নিয়ে সতর্ক করেছেন।
করোনাভাইরাসের এই ‘নয়া রূপ’টি নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ভারতের মহারাষ্ট্রের কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য চিকিৎসক শশাঙ্ক জোশীর মন্তব্যের পরেই।
শশাঙ্ক বলেছিলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাসের নতুন একটি রূপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। তার নাম ডেলমিক্রন। এটির স্পাইক প্রোটিন ডেল্টা ও ওমিক্রন, এই দু’টি রূপের স্পাইক প্রোটিনগুলির মিশেলে গড়া। ডেলমিক্রন এখন ইউরোপ ও আমেরিকায় ছোটখাটো সুনামি এনেছে’।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টিভি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শশাঙ্ক ছাড়াও আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীও ডেলমিক্রনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সম্প্রতি করোনার যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে তা ডেলমিক্রনের প্রভাবেই।
করোনার যতগুলো ধরন আছে তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রামক হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় ডেলটা ও ওমিক্রনকে। ডেলমিক্রন যেহেতু এই দুই ভ্যারিয়েন্টর সংমিশ্রণে তৈরি, তাই এর ভয়াবহতা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে একে ওমিক্রনেরই ‘সুপার স্ট্রেইন’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন।
ডেলমিক্রন ওমিক্রনের থেকে কতটা আলাদা?
ওমিক্রন হল SARS-CoV-2-এর পরিবর্তিত রূপ B.1.1.529, যা প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় মৃদু উপসর্গ বিশিষ্ট এবং এটি অনেক বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। তাছাড়া, ওমিক্রনে মৃত্যুর হারও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকে কম। তবে, ডেলমিক্রন হল ডেল্টা এবং ওমিক্রনের মিলিত রূপ, যেটি মূলত ভ্যারিয়েন্টগুলির ট্যুইন স্পাইক। তাই ডেলমিক্রন ওমিক্রনের থেকে আলাদা।
দ্বিমতে বিশেষজ্ঞরা
যদিও বিষয়টির সাথে একমত নন অনেক বিশেষজ্ঞই। তারা বলছেন, অন্য কোনো মিউটেশনের ফলে ওমিক্রনের পর করোনাভাইরাসের আরও একটি রূপ বেরিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত তাদের জানা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে কিছু ঘোষণা করেনি। জানায়নি আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)। ভারতের জাতীয় কোভিড টাস্কফোর্স বা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এখনও পর্যন্ত ‘ডেলমিক্রন’ রূপের কথা ঘোষণা করেনি।
অনেকের দাবি, বিষয়টি একেবারেই কল্পনাপ্রসূত কিংবা হতে পারে ধারণার বশেই এই মন্তব্য করেছেন শশাঙ্ক। তবে ডেলমিক্রনের ধারণা সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না বলে মত ভারতের একাধিক বিশেষজ্ঞের।
করোনাভাইরাসের শেষ যে রূপটিকে ‘ভেরিয়্যান্ট অব কনসার্ন’ বলে নভেম্বরে ঘোষণা করেছে হু, সেটি ওমিক্রন।
তবে বিশেষজ্ঞরা এও জানিয়েছেন, চিকিৎসক জোশী নিজেও হয়তো ডেলমিক্রন রূপের কথা বলতে চাননি। ডেল্টা ও ওমিক্রন রূপদু’টি ইউরোপ ও আমেরিকায় একই সঙ্গে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, সেই পরিস্থিতিকেই ‘ডেলমিক্রন’ নাম দিয়ে হয়তো তিনি বোঝাতে চেয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৪
আপনার মতামত জানানঃ