সমুদ্রে গবেষণা ও পানির গভীরে প্রাণের সন্ধানে নানা যন্ত্র-যান ব্যবহার করা হয়। এগুলো সাধারণত সাগরের তলদেশে অনুসন্ধান চালায়। পাওয়া যায় নতুন ও বিরল সব প্রাণ-প্রকৃতির খোঁজ। কিন্তু এবার যা পাওয়া গেল, তা দেখতে একটি অনুসন্ধানী যানের মতো। অদ্ভুত এক প্রাণী, যার মাথা অত্যন্ত স্বচ্ছ, পুরো মাথা স্বচ্ছ জলের আবরণে ঢাকা। এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে চোখ, যার লেন্স সবুজ। আছে মাছের মতো পাখনাও।
ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল থেকে সমুদ্রের প্রায় দুই হাজার ফুট নিচে দেখা মিলেছে এই এলিয়েন মাছের। অন্য যে কোন সামুদ্রিক প্রাণী থেকে ভিন্ন ব্যারেলি নামের মাছটির স্বচ্ছ মাথার ভিতরে রয়েছে উজ্জ্বল সবুজ রঙের একজোড়া চোখ।
মন্টেরি বে অ্যাকুরিয়াম রিচার্স ইনস্টিটিউট (এমবিএআরআই) এর রিমোট অপারেটিং যানের সাহায্যে গভীর সমুদ্রের এ প্রাণীটিকে আবিষ্কার করা হয়। এমবিএআরআই-এর দূরবর্তী বা রিমোট অপারেটিং যান ভেনটানা ও ডক রিকেটসের ধারণকৃত ২৭ হাজার ৬০০ ঘণ্টারও বেশি সময়ের ভিডিওতে মাত্র ৯ বার মাছটিকে ক্যামেরায় ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।
মাছটি সমুদ্রের এতই গভীরে থাকে যেখানে রয়েছে খাদ্যের সংকট। তবে, ব্যারেলি মাছের চোখের অবস্থান এমন জায়গায় যে, জলরাশি ভেদ করে এরা খুঁটিয়ে খাবারের সন্ধান করতে পারে। সেইসঙ্গে মাথার ওপরের চোখজোড়া সামনে ঘোরাতেও পারে তারা।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে মন্টেরি বে র্যাচেল কারসনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ব্যারেলি মাছের দেখা মিলেছে। তবে সিএনইটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৩৯ সালে প্রথম এই মাছ সম্পর্কে জানা যায়।
এলিয়েনের মতো এই মাছটির শরীরের বেশিরভাগ অংশ কালো বা অস্পষ্ট হলেও, এর মাথার উপরের অংশটি স্বচ্ছ। এই স্বচ্ছ অংশের ভেতরেই রয়েছে সবুজ চোখজোড়া।
জীববিজ্ঞানীদের মতে, মাছটি এমন এক কঠিন পরিবেশে বাস করে, যেখানে সূর্যের আলো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। তারই ফলস্বরূপ এক শক্তিশালী দৃষ্টিশক্তির অনুভূতি তৈরি হয় মাছটির মধ্যে।
গভীর সমুদ্রের প্রাণীদের চোখের মতো ব্যারেলি মাছেরও রয়েছে টিউবুলার বা নলাকৃতি চোখ। এ ধরনের চোখ সাধারণত বহু-স্তর রেটিনা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। পাশাপাশি থাকে একটি বড় লেন্স, যা তাদের এক দিক থেকে অধিক পরিমাণে আলো সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
২০১৯ সাল পর্যন্ত ধারণা ছিল, মাছটির চোখজোড়া এক জায়গায় স্থির এবং মাথার উপরে সরাসরি যা ছিল তা শুধুমাত্র একটি ‘টানেল-ভিশন’। তবে একই বছর আরেকটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মাছটির চোখ মাথার ওপরের স্বচ্ছ ঢালের মধ্যে ঘুরতে পারে, খাদ্য খুঁজতে পারে এবং সে কী খাচ্ছে তা দেখতেও পারে।
জীববিজ্ঞানীরা আরও জানান, এটি পানিতে গতিহীনভাবে থাকার জন্য বড় ও চ্যাপ্টা পাখনা ব্যবহার করে। অর্থাৎ চারপাশের প্রাণীদের এরা স্পষ্টভাবে দেখতে পারে না। এমনকি এরা নিজেদের ওপরে লুকিয়ে থাকা শিকারীদেরকেও দেখতে পারে না। তবে ছোট মাছ বা প্ল্যাঙ্কটন শিকারের জন্য ওপরের দিকে তাকাতে পারে।
খাদ্যের সন্ধান পেলে ব্যারেলি মাছ অন্ধকার থেকে আক্রমণ করে এবং শিকারকে দ্রুত গ্রাস করে। এ সময় সামনের দিকে তাকানোর জন্য মাছটি চোখ ঘোরায় ও নিজের অবস্থান সম্পর্কে বুঝতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪০৫
আপনার মতামত জানানঃ