অক্টোপাস, কাঁকড়া ও লবস্টারকে ‘সংবেদনশীল প্রাণী’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে এসব প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা বৈজ্ঞানিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার মন্ত্রী লর্ড জ্যাক গোল্ডস্মিথ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবে এখন পরিষ্কার, ডেকাপড (খোলসে ঢাকা কাঁকড়া, লবস্টার চিংড়িজাতীয় প্রাণী) এবং সেফালোপড (শুঁড়ওয়ালা অক্টোপাস স্কুইডজাতীয় প্রাণী) ব্যথা অনুভব করতে পারে এবং এ কারণেই তাদের এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আইনি সুরক্ষার আওতায় আসা দরকার।’
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের তিনশরও বেশি গবেষণা ফলাফল পর্যালোচনা শেষে অক্টোপাস, কাঁকড়া ও লবস্টারের মতো প্রাণীদের ‘সংবেদনশীল প্রাণী’র স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। এ জন্য শিগগিরই দেশটির অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সেন্টিয়েন্স বিল সংশোধন করা হবে।
যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা বলছেন, অক্টোপাস, কাঁকড়া ও লবস্টারের মতো প্রাণী মানুষের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে বিশ্বকে অনুভব করে। গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে, এই প্রাণীগুলো আনন্দ ও বেদনা অনুভব করে।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের গবেষক দল তাদের প্রতিবেদনে সংবেদনশীলতার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি হলো ব্যথা, আনন্দ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, উষ্ণতা, আনন্দ, স্বাচ্ছন্দ্য ও উত্তেজনার মতো অনুভূতির ক্ষমতা। নরওয়ে, সুইডেন, অস্ট্রিয়ার মতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে প্রাণিকল্যাণ আইনের অধীনে রয়েছে এসব প্রাণী।
গবেষণায় এসব অমেরুদণ্ডী প্রাণীর অনুভূতির আটটি পরিমাপ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিখন ক্ষমতা, ব্যথা অনুভবের স্নায়বিক উপস্থিতি এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে এর সংযোগ, চেতনানাশক প্রতিক্রিয়া এবং এমন আচরণ যা আঘাতের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।
গবেষণা প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ক্রাস্টেসিয়ান (খোলসে ঢাকা প্রাণী) এবং সেফালোপড নিঃসন্দেহে মানুষের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে বিশ্বকে অনুভব করে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তাদের সেই অভিজ্ঞতা কি আনন্দ এবং বেদনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত?
আমরা বিশ্বাস করি, গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে, এই প্রাণীগুলো আনন্দ ও বেদনা অনুভব করে। প্রতিবেদনে এসব প্রাণীর কল্যাণে ‘যৌক্তিক ও ব্যাপক’ পরিসরে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে জীবন্ত অবস্থায় কাঁকড়া বা লবস্টারের খোলস উপড়ে না ফেলা অথবা আগুনে না পোড়ানো। শুধু প্রশিক্ষিত লোকজনকে এসব প্রাণী বিক্রির অনুমতি দেয়ার সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কগনিটিভ সায়েন্স ফিলসফার জোনাথন বার্চ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের আইনে সংশোধন এলে বড় ধরনের একটি দ্বিচারিতারও অবসান ঘটাবে। এতদিন ধরে অক্টোপাস ও অন্যান্য সেফালোপড প্রাণীরা কেবল বিজ্ঞান গবেষণায় সুরক্ষা পেয়েছে, এর বাইরে কোনো সুরক্ষা পায়নি।’
স্বপ্ন দেখে অক্টোপাস
পৃথিবীর বিস্ময়কর প্রাণীদের একটি অক্টোপাস। আট পা, তিন হৃদপিণ্ড, নীল রক্ত, ক্যামোফ্লেজের ক্ষমতা, সঙ্গমের পরই মৃত্যু প্রাণীটিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। সম্প্রতি অক্টোপাস সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলের একদল বিজ্ঞানীর অক্টোপাস নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, অনেকটা মানুষের মতো ঘুমাতে পারে অক্টোপাস। এমনকি স্বপ্নও দেখতে পারে।
ঘুমানোর সময় অক্টোপাসের শরীরের রং পরিবর্তন হয়, তা আগেই জানা। নতুন গবেষণায় দেখা যায়, একভাবে নয়, দুইভাবে ঘুমায় অক্টোপাস, যার একটি ‘নীরব নিদ্রা’ আর অন্যটি ‘সক্রিয় নিদ্রা’। উভয় ক্ষেত্রেই দেহের রঙের পরিবর্তন ঘটে।
নীরব নিদ্রার সময় অক্টোপাস স্থির থাকে। এ সময় তাদের চামড়ার রং বিবর্ণ থাকে; চোখের তারা চেরা থাকে। অন্যদিকে সক্রিয় নিদ্রার সময় তাদের চামড়ার রং ও টেক্সচারে কয়েকবার পরিবর্তন হয়। কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসার সময় দুটি চোখই নড়াচড়া করে।
অক্টোপাসের ঘুমানোর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি ও সরীসৃপের সাদৃশ্য রয়েছে। নীরব নিদ্রা সাত মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর সক্রিয় নিদ্রার সময়কাল ৬০ সেকেন্ডেরও কম।
ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ রিও গ্রান্ডে ডো নর্তের ব্রেন ইনস্টিটিউটের ডক্টোরাল শিক্ষার্থী মেডেইরস বলেন, ‘যদি অক্টোপাস স্বপ্ন দেখে, তবে তা আমাদের মতো জটিল হওয়ার সম্ভাবনা কম।’
তিনি বলেন, ‘অক্টোপাসের সক্রিয় নিদ্রার স্থায়ীত্ব খুবই কম; কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিট পর্যন্ত। এ সময়ে যদি তারা স্বপ্ন দেখেও তবে তা ছোট কোনো ভিডিও ক্লিপ বা জিফির মতো স্থায়ী হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭২০
আপনার মতামত জানানঃ