পৃথিবী থেকে এক হাজার ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে পানির সন্ধ্যান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দুটি ছায়াপথের সমন্বয়ে গঠিত একটি এলাকায় পানির আণবিক কণা পাওয়া গেছে, অর্থাৎ SPT0311-58। আলমা গবেষকরা ২০১৭ সালে প্রথম সেটি দেখতে পান।
নতুন গবেষণাটি মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর পর আণবিক গ্যাস নিয়ে সবচেয়ে বিস্তারিত ও জটিল গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ গবেষণার মাধ্যমে পানির অণুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার পাশাপাশি কত দ্রুত মহাবিশ্ব বদলেছে, সে বিষয়েও ধারণা মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকদের মতে, পানির উৎস হিসেবে যে আলোটা বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, সেটির জন্ম এক হাজার ২৮০ কোটি বছর আগে। সময়টিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত রিআয়নিজেশন যুগ বলে।
রিআয়নিজেশন যুগ কী? মূলত মহাবিশ্বের বয়স যখন বর্তমানের ১০০ ভাগের পাঁচ ভাগ মাত্র, সে সময়কে বলা হয় রিআয়নিজেশন যুগ। ওই সময়েই সর্বপ্রথম নক্ষত্র ও ছায়াপথগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। এই আবিষ্কারটি সঠিক প্রমাণিত হলে এটি হবে একইসাথে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে এবং পৃথিবীর বাইরে পানির প্রথম সন্ধান।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন মহাবিশ্বের বয়স মাত্র ৭৮ কোটি বছর, যে সময় জন্ম নেয়া বিশাল ছায়াপথ SPT0311-58-এ মিলেছে বেশ কয়েকটি আণবিক কণা।
ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আণবিক কণাগুলো যে পানির, সে প্রমাণ মিলেছে। প্রাচীন ছায়াপথটিতে চিহ্নিত অণুগুলো হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অণু। চিলির আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (আলমা) টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তারা এই প্রমাণ পেয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, অণুগুলো সৃষ্টি হয়েছিল বহুকাল আগে। বর্তমানে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম হাইড্রাইড থেকে আরও জটিল রাসায়নিক রূপ নিয়েছে সেগুলো। নক্ষত্রের জীবদ্দশার শেষ দিকে সেটির কেন্দ্রীয় বস্তুর উপাদান হিলিয়াম ও হাইড্রোজেনের চেয়ে ভারী হয়ে যায়।
এই হিসাবে গবেষণা থেকে ধারণা করা হয়, ছায়াপথটির জন্মলগ্নের অনেক নক্ষত্র সৃষ্টি হয়ে ধ্বংসও হয়ে গেছে এবং নক্ষত্রগুলোর মৃত্যুর ৮০ কোটি বছরের মধ্যে অণু তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবী, সূর্য, সৌরজগৎ ও মানবজীবন সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের সব তত্ত্বের সঙ্গেই এ ধারণা মেলে।
দৃশ্যত মনে হচ্ছে এখন পৃথিবী থেকে এক হাজার ২৮০ কোটি বছর আগের যে আলো দেখা যাচ্ছে, সেই আলোতে দুটি ছায়াপথের মিলন ঘটছে বলে। ছায়াপথ দুটির ভেতরে দ্রুতবেগে নক্ষত্র গঠিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি তারা ছায়াপথের গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে তারা একজোড়া বিশাল উপবৃত্তাকার ছায়াপথে পরিণত হচ্ছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক শ্রীবাণী জারুগুলা বলেন, ‘আলমা টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ছায়াপথ দুটির জোড়ায়, অর্থাৎ SPT0311-58-এ, আণবিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছি আমরা। দুটি ছায়াপথেরই বড় অংশে পানি আর কার্বন মনো-অক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অক্সিজেন ও কার্বন খুব প্রাথমিক উপাদান। পানি ও কার্বন মনো-অক্সাইডে এ দুটি উপাদান আণবিক রূপে উপস্থিত থাকে। প্রাণের জন্য দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রসঙ্গত, SPT0311-58 বর্তমানে সর্ববৃহৎ ছায়াপথ, যার জন্ম মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক লগ্নেই। অন্য যেকোনো ছায়াপথের চেয়ে এটিতে গ্যাস ও ধুলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ছায়াপথের মাধ্যমে আরও অনেক বিচ্ছিন্ন আণবিক কণা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাওয়া যাবে ভবিষ্যতে। প্রাণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ এসব উপাদান মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত কী প্রভাব ফেলেছে, সে বিষয়েও বিশদ তথ্য পাওয়া যেতে পারে ছায়াপথটি থেকে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪৫
আপনার মতামত জানানঃ