যুক্তরাষ্ট্রের অতিবিপন্ন পাখি ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর্স। সম্প্রতি এই পাখিটি পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই বাচ্চা জন্ম দিয়ে উঠে এসেছে আলোচনায়। মার্কিন বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, স্ব-প্রজনন প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্ম দেওয়ার এ ঘটনা বন্যপ্রাণীর ডিএনএ গবেষণার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে।
২০০৩ সালে দুই বছর ও ২০০৭ সালে সাত বছর বয়সে মারা যাওয়া দুই ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর্সের জিনবিন্যাসের পর সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, ছানা দুটির ডিএনএর সঙ্গে কোনো পুরুষ পাখির ডিএনএর মিল পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘ দিনের গবেষণা শেষে সান ডিয়েগো চিড়িয়াখানার একটি বন্যপ্রাণী গবেষক কমিটির প্রতিবেদনে পিয়ার রিভিউ থেকে জানা গেছে এই তথ্য; যা আমেরিকান জেনেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব জার্নাল অব হেরেডিটিতেও প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগো চিড়িয়াখানার জিনতত্ত্ববিদ অলিভার রাইডারের বরাত দিয়ে বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জিনবিজ্ঞানের নতুন এই তথ্য।
স্বপ্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন একটি ভ্রূণ একটি মেরু কোষ দ্বারা নিষিক্ত হয় অর্থাৎ, একটি কোষ যা নারী থেকে সদৃশ ডিএনএ ধারণ করে তখনই স্ব প্রজনন বা পার্থেনোজেনেসিস ঘটে। শুক্রাণু এবং পুরুষের ডিএনএর অনুপস্থিতিতে মহিলা শারীরস্থান ডিম্বাণুর পরিপূরক হিসেবে তাদের মেরু কোষের সুবিধা নিতে পারে এবং একই ডিএনএর দুটি সেট দিয়ে জীবন তৈরি করতে পারে।একটি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং জিনগতভাবে স্থিতিশীল প্রাণীতে জীবন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ক্রোমোজোমসহ একটি কার্যকর জাইগোট তৈরি করতে পারে।
স্ব-প্রজনন বা পার্থেনোজেনেসিস একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা, তবে এর আগে অন্যান্য প্রজাতিতে রেকর্ড করা হয়েছে। এটি ঘটে যখন মহিলার কোষ একটি শুক্রাণুর মত আচরণ করে এবং একটি ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়। এটি সাধারণত এমন প্রাণীদের মধ্যে ঘটে যাদের প্রজননকারী পুরুষের সংখ্যা কম বা নেই।
অলিভার রাইডার জানান, ৪৬৭টি ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর্স শুমারির সময় দুটি পাখির জিন বিন্যাস করার সময়ই তারা দেখতে পান এই আশ্চরর্য ঘটনাটি। ৪২০টি পুরুষ কন্ডোর্সের জিনবিন্যাস শেষে তারা দেখতে পান, দুটি পাখির বাচ্চার সঙ্গে অন্য কোনো পুরুষ পাখির ডিএনএর কোনো মিল নেই।
অলিভার বলেন, এই বিপন্ন প্রজাতিটিকে বাঁচাতে হলে আমরা স্ব-প্রজনন বা পার্থেনোজেনেসিসের ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। তবে জেনেটিক গবেষকদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে এই দুই কন্ডোর্সের মা পাখিরা এর আগে প্রথাগত পদ্ধতিতেই বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। টানা ২০ বছর ধরে পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে থাকা পাখি দুটি যথাক্রমে ১১টি ও ২৩টি ছানা জন্ম দিয়েছিল।
এর আগে টিকটিকি, সাপ, তিমি, রেসহ বিভিন্ন মাছও স্ব প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মেক্সিকোতে পাঁচ শতাধিক ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর্স দেখতে পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ১৯৮০ সালে মাত্র ২৪টি পাখি ছিল। সেখান থেকে সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাখির সংখ্যা বাড়ে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার-আইইউসিএনের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম পাখি ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর্স ২০ পাউন্ডেরও বেশি ওজনের হয়, তাদের ডানা ১০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত। আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শিকারি পাখিটি ক্রমেই বিপন্ন হতে শুরু করে। এই পাখির গড় আয়ু ১৯ বছরের।
আইইউসিনের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে ৯৩টি ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর্স জীবদ্দশায় বাচ্চা ফুটিয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ