যুক্তরাষ্ট্র সরকার তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য প্রথমবারের মতো নতুন পৃথক পাসপোর্ট চালু করেছে। গত জুন মাসেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে কানাডা, জার্মানি, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কয়েকটি রাষ্ট্র এ বিষয়টি পাসপোর্টে নতুন একটি অপশন হিসেবে যুক্ত করেছিল।
দেশটিতে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের অধিকারের স্বীকৃতির বিষয়ে সরকারের এ উদ্যোগকে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের আর নিজেদের পুরুষ বা নারী দুটি অপশনের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিতে হবে না। এ নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
এ সময় তিনি বলেন, যারা মার্কিন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন, তাদের এই এক্স লিঙ্গ ব্যবহার করে আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের ‘এক্স জেন্ডারভুক্ত’ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর সীমিতসংখ্যক পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। আগামী বছর থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রই যে প্রথম এই বিশেষ পাসপোর্ট চালু করল এমন নয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশে এ ধরনের বিশেষ পাসপোর্ট চালু রয়েছে। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল সরকার বেশ আগে থেকেই তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের আলাদা পাসপোর্ট দিচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক প্রথম বিশেষ ক্যাটাগরির এ পাসপোর্ট পেয়েছেন, তা জানায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য কলরাডোর বাসিন্দা ডানা জিম প্রথম এই পাসপোর্টটি পেয়েছেন। এপিকে এক টেলিফোন সাক্ষাতকারে বিষয়টি জানিয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী ডানা জিম।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কলরাডোর একটি আদালতে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনদের জন্য পৃথক পাসপোর্ট চেয়ে মামলা করেছিলেন ডানা জিম। মামলাটি এখনো বিচারাধীন আছে।
মামলা করার সময় সাংবাদিকদের জিম বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রজন্মের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা যেন তাদের প্রাপ্য অধিকারসহ পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা পায়, সেজন্যই পৃথক পাসপোর্ট চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের অধিকার আদায় বিষয়ক বিশেষ কূটনৈতিক দূত জেসিকা স্টার্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, নারী ও পুরুষের বাইরেও মানুষের লৈঙ্গিক পরিচয় যে বৈচিত্রময়, সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তার স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।
তিনি বলেন, ‘যখন একজন ব্যক্তি তার পরিচিতি বিষয়ক তথ্যে (আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট) নিজের সত্যিকারের পরিচয় দেখতে পান, নিঃসন্দেহে এটি তার জন্য অনেক মর্যাদার একটি ব্যাপার।’
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরসমূহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শক্তিশালী হচ্ছে। অনেক দেশের সরকারও এই শ্রেণির মানুষদের অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের পক্ষে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশও তাদের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য পৃথক পাসপোর্ট চালু করবে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১৮
আপনার মতামত জানানঃ