বৈভব ও প্রাচুর্যের দেশ জাপান। জাতীয় আয়ের নিরিখে যা বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলির অন্যতম। আর সেখানেই কিনা উলট পুরাণ! যে ছবি দেখা গিয়েছিল ইতালিতে, সেই একই ছবি উঠে এল জাপানের কিছু এলাকায়। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, জাপানেও অনেক বড় বড় বাড়ি পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। বাড়ি আছে, কিন্তু মানুষের বাস নেই। অনেকেই আছেন, যারা সেদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। তাই বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন অন্যের কাছে।
কিংবা বহুতল বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। এইভাবে জাপানের বহু এলাকায় একাধিক বড় বড় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও একেবারে জনশূন্য পরিস্থিতি। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এমন ছবি স্পষ্টতই উঠে আসছে। কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রথমত জনসংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পাচ্ছে জাপানে। দ্বিতীয়ত, এযুগের তরুণ প্রজন্ম তাদের কাজের তাগিদে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে। যে কারণে জাপানের বহু এলাকায় অনেকটাই জনশূন্য পরিস্থিতি।
জাপানের জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। আর তাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশটি। দেশের জনসংখ্যা বাড়তে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে থেকে জনবল নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাপান। সেখানকার প্রায় ৮০ লাখ বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে জনসংখ্যা সঙ্কটে।
পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া এসব বাড়ি দেখভালের মানুষও নেই সেখানে। যার ফলে এসব থেকে মিলছে না কোনো রাজস্বও। অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। আর তাই এই বাড়িগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান।
জাপানের এই বাড়িগুলো বিক্রি হবে নামমাত্র মূল্যে। মূলত বাড়িগুলো দেখাশোনা করা এবং সেখান থেকে নিয়মিত ট্যাক্স পেতেই এই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার।
শিগগিরই অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে এসব বাড়ি। ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশটি। বিস্তারিত তথ্য পরে প্রকাশ করবে দেশটির সরকার। এসব বাড়ি কেনার সুযোগ পাবেন জাপানের বাইরের নাগরিকরাও। বিশ্বের যেকোনো দেশের, যেকেউ এসব বাড়ি কেনার সুযোগ পাবেন। এমনটাই জানাচ্ছে জাপান সরকার।
জাপানের জনসংখ্যা দিন দিনই কমছে। জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের চাহিদাও হ্রাস পাবে এটাই স্বাভাবিক। জাপানে অন্তত তাই হচ্ছে। বৃদ্ধরা মারা যাওয়ার পর শূন্য ঘরের তালিকা বাড়ছে।
২০১৮ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জাপানের ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ অঞ্চল পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল। অন্য এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে পরিত্যক্ত সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে মধ্য ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার সমান হয়ে যাবে।
২০১৮ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জাপানের ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ অঞ্চল পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল। অন্য এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে পরিত্যক্ত সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে মধ্য ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার সমান হয়ে যাবে।
ভাড়াটিয়া স্বল্পতা কিংবা উত্তরাধিকারী সমস্যায় থাকা পরিত্যক্ত বাড়িগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ‘আকিয়া’ বলা হয়। ২০১৮ সালে দেশটির মোট সম্পত্তির ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ‘আকিয়া’বাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
খুব কম নাগরিকই এসব বাড়ির মালিকানা নিতে আগ্রহী হন। কারণ জাপানে একের অধিক বাড়ি থাকলে করের পরিমাণ বেশি দিতে হয়, এ কারণে স্বজনরাও এসব বাড়ি নিতে চান না।
সব মিলিয়ে কীভাবে এসব পরিত্যক্ত সম্পত্তি কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে রীতিমতো বিপদে পড়েছে জাপান সরকার।
দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা কমে যাওয়া এবং কর্মসূত্রে তরুণ প্রজন্মের অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতাই জাপানকে জনহীন করে দিচ্ছে। ২০১৮ সালে চার লাখ ৪৯ হাজার জনসংখ্যা কমে গিয়েছিল জাপানের। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কমেছিল অন্তত ১০ লাখ মানুষ। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আবার আবার দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এ কারণে জাপানের বহু বাড়ি বর্তমানে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। কিন্তু বাড়ির মালিকের খোঁজ নেই। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব বাড়ি।
জাপানের আইন অনুযায়ী, পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকার সহজে অধিগ্রহণ করতে পারে না। এমনকী সেই সমস্ত সম্পত্তি কেউ ব্যবহারও করতে পারে না। তাই এই পরিত্যক্ত বাড়িগুলি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে সরকার।
দেশটির টোকিও টোয়োশিমা-কু শহরের প্রশাসন এই সমস্যা সমাধানে একটি উপায় বার করেছে। বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত বাড়ি যিনি কিনবেন এবং সংস্কার করতে চাইবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ভর্তুকি দেওয়া হবে। এই নিয়ম চালু করতে চলেছে আরও কিছু অঞ্চলের প্রশাসন।
ইতোমধ্যে টোকিয়ো থেকে ঘণ্টা দুয়েক দূরত্বে থাকা ওকোসুকা-র প্রশাসন বাড়ি বিক্রির জন্য আলাদা করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। পুরনো বাড়ি কিনতে ইচ্ছুকদের জন্য খুব সস্তায় বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র চার লাখ টাকাতেই জমিসহ গোটা বাড়ি কেনার সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে এজন্য একটি শর্ত রয়েছে। যিনি বা যারা ওই বাড়ি কিনবেন তাদের ১৮ বছরের নীচে সন্তান থাকতে হবে। এলাকায় কম বয়সীদের কমতে থাকা সংখ্যা আবারও বাড়ানোর জন্য দেশটির সরকার এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
বাড়িগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। কিছু বাড়ি কেবল প্রয়োজনীয় ট্যাক্স ও এজেন্ট কমিশনের মাধ্যমেই কেনা যাবে। যেই বাড়িগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে কিংবা যেগুলো বিলাসবহুল বাংলো সেগুলোর দাম পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় ৩ লাখ থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বাড়ি কেনার পর তা মেরামত করতে অর্থের প্রয়োজন হলে, সেখানেও ভর্তুকি দেবে জাপান সরকার। এমন ঘোষণাই দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ