মানুষের কিডনি নানা কারণেই বিকল হয়ে যায়। এমন জটিল রোগীদের দরকার হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের। আর এ জন্য অন্য কাউকে কিডনি দান করতে হয়। কিন্তু এ দানের হার খুব বেশি নয়। এ সমস্যার সমাধানে এখন কিডনি প্রতিস্থাপনকারীদের শরীরে বসবে শূকরের কিডনি।
শুনতে অবাক লাগলেও পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনে সফলতা পাওয়ার কথা জানালো যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটা বড় ধরনের অগ্রগতি। এই পথ ধরে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হতে পারে।
সূত্র মতে, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং প্রতিস্থাপনের পর রোগীর শরীরে সেই কিডনি স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন নিউ ইয়র্ক সিটির ‘এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ’ এর গবেষকরা।
এই প্রতিস্থাপনের জন্য একটি শূকরের জিন পাল্টে দেওয়া হয়েছিল, যাতে প্রতিস্থাপন করা হলে মানবদেহ সেটাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান না করে। সূত্র মতে, যে নারীর দেহে ওই কিডনি লাগানো হয়েছে তিনি আগে থেকেই ‘ব্রেইন ডেড’। লাইফ সাপোর্টে থাকা ওই রোগীর কিডনিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। পরিবারের অনুমতি নিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে তার শরীরে কিডনিটি বসানো হয়।
গবেষকরা রোগীর পেটের বাইরে পায়ের উপরের অংশের কাছে কিডনিটি রক্তনালীর সঙ্গে যুক্ত করে দেন এবং তিন দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ড. রবার্ট মন্টগোমারি বলেন, প্রতিস্থাপনের পরপরই স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করেছে নতুন বসানো কিডনি। মানুষের কিডনি বসিয়ে ‘যে পরিমাণ মূত্র নিষ্কাশণের আশা করা যায়’ এক্ষেত্রেও ঠিত ততোটাই পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, এর আগে মানুষ ছাড়া অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণির ক্ষেত্রেও জিন রূপান্তর না করা কিডনি বসিয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তীব্রভাবে সেটা প্রতিহত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি।
ড. মন্টগোমারি বলেন, কিডনি গ্রহীতার দেহে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা আস্বাভিক ছিল- যা কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা চিহ্নিত করে।
গত কয়েক দশক ধরে গবেষকরা পশুদেহ থেকে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু মূল সমস্যা ছিল, মানবদেহ যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সেই অঙ্গ প্রত্যাখ্যান না করে, তা নিশ্চিত করা।
গবেষক দলটি শূকরের জিন বিন্যাস থেকে আলফা-গ্যাল নামে একটি অংশ বাদ দেন, যেটি শর্করা তৈরি করত। এরপর সরকারের অনুমতি নিয়ে সেই পরিবর্তিত জিনের একটি শুকরের জন্ম দিয়ে সেটি বড় করে তোলা হয়।
গবেষকরা এখন মনে করছেন, জিন রূপান্তরিত ওই শূকরের হৃদযন্ত্র, ভালভ এবং ত্বকসহ অন্যান্য অঙ্গও মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
ড. মন্টগোমারি জানান, এই পরীক্ষার অর্জন থেকে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে কিডনি বিকল হওয়া মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের দেহেও পরীক্ষামূলকভাবে কিডনি বসানো যাবে।
গবেষকরা জানান, মানুষ ও শূকরের হৃদযন্ত্রের গঠন (অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি) অনেকটাই এক। এই দুই প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায়ও অনেকটা এক। সেই কারণেই শূকরের দেহাংশ মানুষের শরীরে সচল থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৪
আপনার মতামত জানানঃ