এমনিতেই করোনা মহামারির ধাক্কায় টালমাটাল গোটা পৃথিবী। এর মধ্যে বিশাল আকারের গ্রহাণু পৃথিবীর কাছাকাছি আসার খবরে অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পৃথিবীর কাছ দিয়ে সব সময়ে বিভিন্ন আকারের গ্রহাণু অতিক্রম করে। তবে নাসার পক্ষ থেকে সব গ্রহাণু নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয় না। তবে সম্প্রতি নাসা জানিয়েছে, নভেম্বরের মধ্যে বিশাল সাতটি গ্রহাণু উড়ে যাবে পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে। এগুলোর কোনো কেনোটি আকারে গিজার পিরামিডের চেয়েও বড় হবে।
এরমধ্যে সবচেয়ে কাছ দিয়ে যে পাথরখণ্ডটি উড়ে যাবে তার নাম রাখা হয়েছে ১৯৯৬ ভিবিথ্রি। ২০ অক্টোবর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকবে ২১ লাখ মাইলের মতো। এর ব্যাস প্রায় ৭৫৪ ফুট।
নাসার সেন্টার ফর নেয়ার-আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজের তথ্য বলছে, গত মাসে সন্ধান পাওয়া ২০২১ এসএমথ্রি নামের গ্রহাণুটি শুক্রবার পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাবে। এ গ্রহাণুর ব্যাস সর্বোচ্চ ৫২৫ ফুট। অর্থাৎ পাথরখণ্ডটি গিজার পিরামিডের চেয়েও বড় হবে। এর সঙ্গে যদি পৃথিবীর সংঘর্ষ হয় তাতে পৃথিবীর যেখানে এটি আছড়ে পড়বে ওই অঞ্চলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবে।
২০২১ এসএমথ্রিকে ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্ট’ বলা হচ্ছে। নাসা বলছে, এগুলো ধূমকেতু বা পাথরখণ্ড যা কাছাকাছি কোনো গ্রহের মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পৃথিবীর কাছাকাছি নিজের কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। পৃথিবী থেকে ১২০ মাইলের মধ্যে এ ধরনের যা কিছু আসে সেগুলোকেই ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্ট’ বলা হচ্ছে।
২০২১ এসএমথ্রি যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছ দিয়ে উড়ে যাবে, তখন পৃথিবীর সঙ্গে এর দূরত্ব হবে ৩৬ লাখ মাইলের মতো। শুনে হয়তো মনে হতে পারে, সে তো অনেক দূর দিয়ে যাবে। তাহলে, বিপদের সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে শুক্র গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব মোটামুটি ৭৪৮ লাখ মাইলের মতো হয়ে থাকে। দুই গ্রহের কক্ষপথের ওপর নির্ভর করে এ দূরত্ব কতটা হবে। অর্থাৎ শুক্রগ্রহের চেয়ে অনেক বেশি কাছ দিয়ে যাবে পাথরখণ্ডটি।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে ৪৬০ ফুট বা এর চেয়ে বড় দুই-তৃতীয়াংশ গ্রহাণু আবিষ্কার করা যায়নি। এসব গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এসে আঘাত করলে যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। তাই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাসহ অন্যান্যরা এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের গবেষণার লক্ষ্য হলো পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণু ঠেকানো। এ লক্ষ্যেই সম্প্রতি একটি মহড়ার আয়োজন করে নাসা। এতে বিজ্ঞানীদের সাড়ে তিন কোটি মাইল দূর থেকে একটি গ্রহাণুর পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ঠেকাতে দেওয়া হয়েছিল।
মাঝেমধ্যেই বিশাল আকারের সব পাথরখণ্ড পৃথিবীর গা ঘেঁষে চলে যায়৷ ২০১৮ সালের এপ্রিলে ২০১৮জিইথ্রি নামের ৫০ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু বিপজ্জনকভাবে পৃথিবীর কাছে চলে আসে৷ মাত্র ২১ ঘণ্টা আগে জ্যোতির্বিদরা এটির উপস্থিতি টের পান৷ এরও পাঁচ বছর আগে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি উল্কা রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে আঘাত হানে৷ আকারের তুলনায় বিপর্যয় কম মাত্রারই হয়েছিল৷ কয়েক হাজার বাড়িঘর এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন৷ তবে ভাগ্যক্রমে এর আঘাতে কেউ প্রাণ হারাননি৷
এদিকে, গ্রহাণু নিয়ে আবারও চিন্তিত গোটা পৃথিবী। কীভাবে থামানো যায় তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। কখনো যদি বিশাল আকারের কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, কী করবো আমরা? এই আশঙ্কা সামনে রেখে কিভাবে তা এড়ানো যায়, সে গবেষণাই করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪২
আপনার মতামত জানানঃ