আফগান নারী ও মেয়ে শিশুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙায় তালিবানের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে তিনি অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে আফগানিস্তানে অর্থপ্রবাহ বজায় রাখতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানের দুই দিনের বৈঠক শেষে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি এ বার্তা দেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর গত কয়েক মাসে পুরো পাল্টে গেছে দেশটির চেহারা। একের পর এক এলাকার দখলে নিয়েছে তালিবান। এরই মধ্যে আফগান নারী ও পুরুষের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নারীরা বাড়ির বাইরে গেলে অবশ্যই তাদের বোরকা পরতে হবে। এ ছাড়া এ সময় তাদের সঙ্গে অবশ্যই একজন পুরুষ থাকতে হবে। ফলে নারীদের বাইরে চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নারীরা।
তালিবান শরিয়া মোতাবেক নারী স্বাধীনতা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও আফগান নারীদের আতঙ্ক কাটেনি। তারা বলছেন, তালিবানের অতীত শাসনে যেভাবে নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় তারা।
আফগানিস্তানে নারী ইস্যুতে নিজেদের করা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেই চলেছে কট্টরপন্থি ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবান। নারীদেরকে সরকারে নেয়া, তাদেরকে চাকরি করতে দেয়ার ঘোষণা দিয়েও পরে উল্টো কথা বলা তালিবান এবার ঘোষণা করেছে ছাত্রীদেরকে এমনভাবে বোরকা ও নেকাব পরতে হবে, যেন কেবল তাদের চোখ খোলা থাকে।
রাজধানী কাবুলের দখল নেয়ার এক মাস যেতে না যেতেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রীদের আবায়া ও নিকাব পরার নির্দেশ এসেছে, যদিও কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আদেশ এসেছিল, বোরকা বাধ্যতামূলক নয়।
নারী শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বের হতে হলে সঙ্গে একজন পুরুষ আত্মীয় থাকতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। অর্থাৎ নারীদের জন্য একা বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেল।
৯০ দশকের শেষ ভাগে তালিবান যখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল, সে সময় নারী অধিকার ভীষণভাবে ভুলণ্ঠিত হয়েছে। তাদের শিক্ষা, চাকরির অধিকার কেড়ে নেয়া হয়, একা বাড়ির বাইরে গেলেও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।
তালিবান শরিয়া মোতাবেক নারী স্বাধীনতা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও আফগান নারীদের আতঙ্ক কাটেনি। তারা বলছেন, তালিবানের অতীত শাসনে যেভাবে নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর সেই তালিবান আবার দেশটির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠার পর নারীদের নিয়ে আবার উদ্বেগ তৈরি হয়। তবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয় যে, তারা নারীদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেবে।
১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশের পর জানানো হয়, নারীদেরকে বোরকা পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে হিজাব পরতে হবে।
আগেই ঘোষণা দেয়া হয়, তালিবান জামানায় এবার নারীদেরকে চাকরি করতে দেয়া হবে। তবে পরে নারীদেরকে ঘরে থাকার নির্দেশ এসেছে।
কাবুল দখলের পর নারীদেরকে সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তালিবান নেতারা। তবে পরে জানানো হয়, নারীদেরকে সরকারে নেয়া হবে না।
সোমবার নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আফগান নারী ও মেয়ে শিশুদের দেওয়া তালেবানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হতে দেখে আমি বিশেষ শঙ্কিত। আমি জোরালোভাবে তালিবানকে নারী ও মেয়ে শিশুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত মাসে তালিবান ছেলেদের স্কুলে ফেরার অনুমতি দিয়েছে। তবে এখনও অপেক্ষায় রয়েছে লাখ লাখ মেয়ে শিশু। এই পদক্ষেপের কারণে আফগানিস্তানের মেয়েদের শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। গত আগস্টে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নারী ও মেয়েদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় তালিবান।
জাতিসংঘ প্রধান বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে আফগানিস্তানের নারী ও মেয়ে শিশুদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। নারী ও মেয়ে শিশুদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা দরকার।’
এছাড়া নিজের বক্তব্যে অ্যান্তোনিও গুতেরেস আফগানিস্তানে অর্থপ্রবাহ বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার উপায় খোঁজা প্রয়োজন… আর আন্তর্জাতিক আইন না ভেঙেই এটা করা যায়।’
নারীদের অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তালিবানের বদনামের শেষ নেই। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আগের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় নারীদের নানা নিপীড়নের শিকার হতে হয় কট্টরপন্থী এ সংগঠনের কাছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবান শাসনামলে নারীদের জীবনযাপন বদলে যায়। নানা নিয়মের বেড়াজালে অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়েন নারী। নারী স্বাধীনতা কী, তা বোধ হয় সে সময় ভুলতেই বসেন তারা। সে সময় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ও চাকরি নিষিদ্ধ করা হয়। নারীদের খেলাধুলা ছিল নিষিদ্ধ। বাইরে যেতে হলে পুরো শরীর ঢেকে যেতে হতো তাদের। পুরুষসঙ্গী ছাড়া বের হতেও পারতেন না তারা। হত্যা ও ব্যভিচারের সাজা ছিল জনসমক্ষে ফাঁসি।
সেই তালিবান আবার ক্ষমতায় আসার পর শঙ্কায় রয়েছেন দেশটির নারী ও অধিকারকর্মীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫১
আপনার মতামত জানানঃ