করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৫২। বেশিরভাগ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমিয়ে দিয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। তবে বেশির ভাগ দেশে নারীর তুলনায় পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেশি কমেছে। খবর রয়টার্সের।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে। আজ সোমবার প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, গত বছর গড় আয়ু যে পরিমাণ কমেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর এমনটা হয়নি।
২৯টি দেশের ওপর এই গবেষণা চালায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ২২টি দেশে গড় আয়ু কমেছে ছয় মাসের বেশি। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চিলি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছিল। আর ২৯টি দেশের মধ্যে ২৭টি দেশেই মানুষের গড় আয়ু কমেছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে গড় আয়ু কমে যাওয়া করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
২০১৫ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ১৫টি দেশে পুরুষদের এবং ১১টি দেশে নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু প্রায় এক বছর কমে গেছে। অক্সফোর্ডের লিভারহালম সেন্টার ফর ডেমোগ্রাফ্রিক সাইন্সের (এসিডিএস) গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া সহ-প্রধান জোস ম্যানুয়েল আবুর্তো বলেন, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ যেমন-স্পেন, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, ইতালি, বেলজিয়াম এবং অন্যান্য দেশগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমে গিয়েছিল। এরপর করোনায় এই হার সবচেয়ে বেশি কমেছে।
গত বছর গড় আয়ু যে পরিমাণ কমেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর এমনটা হয়নি।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনের সহ লেখক ড. রিধি কাশ্যপ বলেন, কোভিড-১৯ বিভিন্ন দেশে কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে, সে চিত্রই উঠে এসেছে আমাদের এই গবেষণার ফলাফলে।
বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে বেশি মাত্রায়। যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ২০১৯ সালের চেয়ে ২.২ বছর কমে গেছে, যা এ গবেষণার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
১৫টি দেশে পুরুষদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু মোটামুটি এক বছরের মত কমে গেছে। নারীদের ক্ষেত্রে একই ফলাফল পাওয়া গেছে ১১টি দেশে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে গত ৫.৬ বছরে যে অগ্রগতি হয়েছিল, কোভিড মহামারি তা মুছে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ৬০ বছরের কম বয়সী এবং যে বয়সে মানুষ কাজ করে, সেই বয়স শ্রেণির মধ্যে। আবার ইউরোপে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার বেড়েছে বেশি।
রয়টার্সের হিসাব অনুসারে, করোনায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মহামারিবিষয়ক সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক ড. ঋধি কাশ্যপ বলেন, কোভিড–১৯ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে, গবেষণার ফলাফলে তা বোঝা যায়।
আরও বড় পরিসরে মহামারীর ক্ষতির মাত্রা নিয়ে গবেষণার জন্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকেও কোভিডে মৃত্যু সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন ড. ঋধি কাশ্যপ।
তিনি বলেন, “পুরো বিশ্বে মহামারীর প্রভাব আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও তথ্য জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।”
এর আগে ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের গড় আয়ু দেড় বছর কমে গেছে।
সিডিসি জানায়, ২০২০ সালে মার্কিনিদের গড় আয়ু দাঁড়ায় ৭৭ দশমিক ৩ বছরে। যা ২০১৯ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ৮ বছর। ২০০৩ সালের পর মার্কিনিদের গড় আয়ুতে এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। গড় আয়ু হ্রাস মূলত কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর কারণে ঘটেছে। গড় আয়ু হ্রাসে করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যু ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ দায়ী।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের তুলনায় নারীর প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৫ বছর বেশি। করোনা পরিস্থিতিতেও নারীদের তুলনায় পুরুষের গড় আয়ু কমেছে বেশি। পুরুষের গড় আয়ু ২০১৯ সালে ৭৬ দশমিক ৩ বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ছিল ৭৪ দশমিক ৫ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে, ২০১৯ সালে ৮১ দশমিক ৪ বছরের তুলনায় ২০২০ সালে নেমে আসে ৮০ দশমিক ২ বছরে।
সিডিসির তথ্যমতে, মহামারি শুরুর পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যু ২০২০ সালে রেকর্ড করা হয়েছে। গড় আয়ু কমার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনা, হত্যা, ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৯
আপনার মতামত জানানঃ