একদিকে করোনা অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ডেঙ্গু জ্বর বেশি হচ্ছে। শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে।
ডেঙ্গুজ্বর শরীরকে দুর্বল করে দেয়। শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। জ্বর চলে গেলেও শরীর স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে একটু সময় লাগে। সঠিক যত্ন ও নিয়মমাফিক না চললে শরীর সহজে ঠিক হয় না।
ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর রোগী দুর্বল থাকে, অবসাদগ্রস্ত থাকে, মাথা হালকা থাকে, চলাফেরার সময় কিছু ভারসাম্যহীনতা থাকে, গভীর ও নিবিড়ভাবে কাজে মনোনিবেশ করা যায় না। যারা কাজে ব্যস্ত থাকেন, তারাও জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর গভীরভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না। মূলত ডেঙ্গুজ্বরের কারণে মস্তিষ্কের অ্যানালাইটিক্যাল ক্ষমতা হ্রাস পায়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুর কারণে ব্রেনের অ্যানালাইটিক্যাল ক্ষমতা হ্রাস পায়, তাই এ সময়ে ওই ধরনের কাজে হাত দেওয়া ঠিক নয়। বরং ওই ধরনের কাজ করতে গেলে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে না। এক ধরনের অবসাদ ও হতাশা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, সপ্তাহ দু-তিনেক পর রোগীর শারীরিক ও মানসিক কাজ করার ক্ষমতা আগের মতোই ফিরে আসবে। তাই ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর শিথিলতার সঙ্গে দু-তিন সপ্তাহ কাটাতে হবে।
এ সময় কিছু করণীয় হলো—
কারও আগে থেকেই রাত জাগার অভ্যাস থাকলে ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর এ অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পারতপক্ষে রাত ১০টার পর আর জেগে থাকবেন না। রাতের বেলায় ক্ষতিপূরণকারী কিছু হরমোন শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়।
দিনের বেলায় জেগে থাকার ফলে যে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়, রাতে ঘুমানোর ফলে ওই বিষাক্ত পদার্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিপূর্ণ নিবিড় ঘুমের মাধ্যমে ব্রেন সতেজ হয়, মন সতেজ হয়, শরীরও সতেজ হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়।
একবারে বাইরে চলাফেরা না করা ভালো। প্রথমে বাড়িতে চলাফেরা করুন। এরপর বাড়ির আঙিনায় যান, তার পর বাজার, অফিস-আদালতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে অফিসে যেয়েই জটিল কাজ করা উচিত হবে না। প্রথমে অফিস-আদালতে হালকা রুটিনওয়ার্ক করুন। এভাবে সপ্তাহ দু-তিনেক কাটান। তার পর যার যে কাজ সে কাজ শুরু করুন।
ডেঙ্গুর সময় রোগীরা সাধারণত তরল, নরম এবং সহজপাচ্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল থাকে। জ্বর সারলেই হুট করে খাবারের মেন্যুতে বড়সড় পরিবর্তন না আনাই ভালো।
জ্বরের সময় যে খাবারগুলো খেতে বারণ করা হয়েছে, সেগুলো কিছুদিন এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আর যেগুলো খেতে বলা হয়েছে, সেগুলোই চালিয়ে যাওয়া উচিত। ধীরে ধীরে তরল, নরম ও সহজপাচ্য খাবার থেকে উঠে আসুন।
তরল খাবার আগের মতো বেশি না খেয়ে কিছুটা কমিয়ে ফেলুন। ফলমূল যেভাবে বেশি করে খেয়েছেন, সেভাবে না খেয়ে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ যেভাবে খায়, সেভাবে খেতে থাকুন। নরম খাবার, যেমন জাউভাত না খেয়ে এখন ভাত খান।
তবে এ পর্যায়ে গুরুপাক খাবার, যেমন-রোস্ট, বিরিয়ানি ইত্যাদি না খেয়ে লঘুপাক বা কম মসলা দিয়ে সহজে হজম হয় এমন খাবার খান।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে যদি জিমে যাওয়ার অভ্যাস থাকে, তা হলে ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর কিছু দিন জিম থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজন হলে এক বা দুই মাস অপেক্ষা করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলেও এ সময় ব্যায়াম করবেন না।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৫৩
আপনার মতামত জানানঃ