লাগবে না সড়কবাতি; সড়কের দু’পাশের উদ্ভিদের পাতা থেকে বিচ্ছুরিত হবে আলো। সেই আলোতেই আলোকিত হবে সড়ক। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা এমন আলোর উৎস তৈরির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই গবেষণা সফল হলে সড়কবাতির প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই কমে আসবে। নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে কাজে লাগবে সূর্যের আলো। কমে আসবে বিদ্যুতের ব্যবহার।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অপটিমিস্ট ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উদ্ভিদ ন্যানোবায়োনিক্স’ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এ কাজটি করবেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জলকামান, তামাক, তুলসী, ডেইজি এবং হাতির কান পাতার মধ্যে লুসিফেরেজ এবং লুসিফেরিন থেকে জ্বলজ্বলে উপাদান প্রবেশ করাবেন।
আরও বলা হয়, এতে ওই উদ্ভিদগুলো সূর্য বা এলইডি লাইটের মতো দৃশ্যমান বা অতিবেগুনি আলো শোষণ এবং সঞ্চয় করে অন্ধকারে ফসফোরসেন্স হিসেবে ছেড়ে দিতে পারবে।
এ গবেষণার অন্যতম গবেষক শিলা কেনেডি বলেন, ‘জীবন্ত উদ্ভিদের নবায়নযোগ্য রাসায়নিক শক্তির সঙ্গে অন্তর্নিহিত আলো তৈরির পদক্ষেপটি একটি সাহসী উদ্যোগ। এতে আলোর জন্য বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহারেও একটি মৌলিক পরিবর্তন আসবে।’
মাত্র ১০ সেকেন্ড এলইডি আলোর উপস্থিতি গাছ গুলিকে আগের তুলনায় ১০ গুণ উজ্জ্বল এবং এক ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলতে সহায়তা করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ন্যানো পার্টিকেল ইমপ্লান্ট উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণসহ স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে কোন প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে না। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে সহায়তার পাশাপাশি মানুষসহ সব উদ্ভিদ-নির্ভর প্রজাতির জন্যও উপকারী হবে।
এর আগে ২০১৭ সালে এমন উদ্ভিদ উদ্ভাবনের এক চেষ্টায় সফল হয়েছিল গবেষকরা। জোনাক পোকার মিটিমিটি আলোর উৎস হলো এর দেহের অক্সিডেটিভ এনজাইম উপাদান লুসিফেরাসি।
এমআইটির রাসায়নিক প্রকৌশলের অধ্যাপক মাইকেল স্ট্রানো ও তার সহকর্মীরা এই উপাদানকেই গাছের ভেতর স্থাপন করেন। তাদের এ গবেষণা নিবন্ধটি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি প্রকাশিত ন্যানো লেটার্স সাময়িকী প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞানীরা প্রথমে লুসিফেরাসিসমৃদ্ধ ন্যানো বস্তুকণা তৈরি করেন। এর সঙ্গে যোগ করেন কোএনজাইম এ। উদ্ভিদের সংশ্লেষণে সহায়ক এই কোএনজাইম। এই দুই উপাদানের মিশ্রণে পরীক্ষাধীন গাছকে চুবিয়ে তা উচ্চ চাপে রাখা হয়। এতে উদ্ভিদের শাখা-প্রশাখা ও পাতার বিভিন্ন জায়গায় মিশ্রণের উপাদানগুলো প্রবেশ করে। এভাবে প্রক্রিয়াকরণের পর ওই গাছগুলো থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত আলো পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণা নিবন্ধটির জ্যেষ্ঠ লেখক অধ্যাপক স্ট্রানো জানিয়েছেন, তারা শালুক, লতাপাতার ওপর গবেষণাটি করেছিলেন। ঘর থেকে সড়ক পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় আলোর ব্যবস্থাপনায় তাদের এ গবেষণা কাজে আসবে বলে তারা আশা করেন।
তিনি বলেন, গাছের নিজস্ব শক্তি আছে। তাদের গবেষণা আসলে আলো উৎপাদনে উদ্ভিদের ওই শক্তিকেই কাজে লাগানোর কৌশল।
তবে সেবারই প্রথম আলো উৎপাদী গাছ তৈরির চেষ্টা হয়নি। তারও আগে জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে এমন গাছ পাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেসব গবেষণায় সীমিত সাফল্য পাওয়া গেছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ