ইন্টারনেটের কল্যাণে অনলাইন কেনাকাটা এখন বেশ জনপ্রিয়। খাবার থেকে জামা, বাড়ি থেকে গাড়ি— এক ক্লিকে এখন সব কিছুই হাতের মুঠোয়৷ অনলাইনে কেনা-বেচাটা এখন একেবারে সহজ৷ তবে এবার এক নারী অনলাইনে কিনলেন শুক্রাণু। ইউটিউব দেখে গর্ভে সেই শুক্রাণু প্রবেশ করানো প্রক্রিয়া শিখেছেন। শেষ পর্যন্ত ১০ মাস পর জন্ম দিয়েছেন কন্যা সন্তান। অবাক করা এই ঘটনা ঘটেছে ইংল্যান্ডে।
কোনো রকম সম্পর্ক ছাড়াই সন্তান পেতে চেয়েছিলেন ৩৩ বছরের স্টেফানি টেলর। স্টেফানি শুক্রাণু কিনেছেন ইন্টারনেট থেকে। ইউটিউব দেখে সেই শুক্রাণু গর্ভে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি শিখেছেন। শেষে ই-বে থেকে কিনেছেন প্রজনন প্রক্রিয়ার দরকারি জিনিসপত্র। এর দশ মাস পরে জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের। কন্যার নাম রেখেছেন ইডেন। স্টেফানি এই ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ এবং ‘সত্যিকারের অনলাইন শিশু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
যদিও স্টেফানির কাহিনী শুনে ইডেনের আরও একটি নাম দিয়েছেন পরিচিতরা। আর সেটি হচ্ছে ‘ই-বেবি’ বা ‘ই-সন্তান’। রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিরর।
অনলাইনে লেনদেন, কেনাকাটা বা বার্তা আদান-প্রদানের পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিকের অদ্যাক্ষর ‘ই’ জুড়ে দেওয়া হয়। স্টেফানির কাহিনী শুনেও অনেকের মনে হয়েছে এই সন্তানের জন্মের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে অনলাইনের সকল বিষয়। তাই স্টেফানি টেলরের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু ইডেন আসলে ‘ই-সন্তান’।
তবে গর্ভধারণ কেন্দ্রে না গিয়ে ইউটিউব দেখে শিখে বাড়িতে গর্ভধারণ করার কারণ কি? স্টেফানি জানিয়েছেন, তিনি প্রথমে এটি ভেবে দেখেছিলেন। প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি গর্ভধারণ কেন্দ্রে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাদের সন্তান ধারণ করানোর মূল্য এতোটাই বেশি যে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হন স্টেফানি।
এতো সংগ্রাম আর কষ্ট করে অনলাইনে শিখে শিশু ইডেনের জন্ম দিলেও এটিই স্টেফানির প্রথম সন্তান নয়। পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে তার।
স্টেফানি শুক্রাণু কিনেছেন ইন্টারনেট থেকে। ইউটিউব দেখে সেই শুক্রাণু গর্ভে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি শিখেছেন। শেষে ই-বে থেকে কিনেছেন প্রজনন প্রক্রিয়ার দরকারি জিনিসপত্র। এর দশ মাস পরে জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের।
পাঁচ বছরের এক পুত্রসন্তানের জননী স্টেফানি দ্বিতীয় সন্তানের চেষ্টা করছিলেন। বিষয়টি এক বন্ধুকে জানালে অনলাইনে শুক্রাণু কেনার একটি অ্যাপের সন্ধান দেন সেই বন্ধু। ওই অ্যাপে শুক্রাণু দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির পরিবার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই পাওয়া যায়। স্টেফানি জানিয়েছেন, সেখান থেকেই নিজের সন্তানের জন্য শুক্রাণু দাতা খুঁজে নেন তিনি।
তার প্রথম সন্তানের বয়স পাঁচ বছর। সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে এখন আর সম্পর্ক নেই স্টেফানির। তার চাওয়া ছেলে সন্তান যেন একা বড় না হয়। সেই জন্যই আরেকটি সন্তান নিতে চাচ্ছিলেন। তবে অর্থনৈতিক বিষয়টির বিবেচনায় যা ছিল তার জন্য বেশ কঠিন ছিল। যদি অনলাইনে এমন সার্ভিস না থাকতো তাহলে কখনওই তিনি সন্তানের মা হতে পারতেন না।
স্টেফানি চেয়েছিলেন তার সন্তান যেন তারই মতো দেখতে হয়। তার সঙ্গে শারীরিক গঠন মেলে এমন কাউকেই খুঁজছিলেন তিনি। আর স্বভাবের দিক থেকেও চাইছিলেন পরিবারমুখী মানুষ। পছন্দমতো শুক্রাণু দাতা পেয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যেই শুক্রাণু পেয়ে যান স্টেফানি। আর প্রথম চেষ্টাতেই সফল হন।
স্টেফানি জানিয়েছেন, প্রথমে এ ব্যাপারে তার বাড়ির কয়েক জন সদস্য রাজি না হলেও ইডেনের জন্মের পর তারা খুশি। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সন্তানের জন্ম দিতে পেরে স্টেফানিও গর্ববোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো শুক্রাণু দিয়ে যান ওই ডোনার। অক্টোবারের ১৫ তারিখ প্রায় চার কেজি ওজনের সুস্থ মেয়ে সন্তান প্রসব করেন তিনি। ইডেন বড় হলে ডোনারের সঙ্গে তাকে দেখা করিয়ে দেয়ার ইচ্ছা আছে বলে জানান স্টেফানি।
ব্রিটেনে যে দম্পতিদের সন্তান হচ্ছে না— তাদের অনেকেই নানা কারণে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা পান না। ফলে এদের কেউ কেউ গর্ভধারণের জন্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে খুঁজে নিচ্ছেন স্পার্ম ডোনার বা শুক্রাণু দাতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ