আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের সরকারি চাকরিজীবী নারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে তালিবান। কাবুলের মেয়র হামদুল্লাহ নোমান সরকারি নারী চাকরিজীবীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তালিবানের নতুন এই নির্দেশের তথ্য জানান তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামদুল্লাহ নোমান বলেন, ‘কিছু সময়’ নারীদের কাজ করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছে তালিবান।
হামদুল্লাহ নোমান বলেন, নারীদের বদলে পুরুষদের কাজ করার বিকল্প নেই; শুধুমাত্র এমন ক্ষেত্রে নারীদের কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নকশা এবং প্রকৌশল বিভাগের দক্ষ কর্মীদের পাশাপাশি নারীদের জন্য পাবলিক টয়লেটের নারী কর্মীরাও আছেন।
কাবুলের মেয়রের এ মন্তব্য দেশটিতে নারীদের প্রকাশ্যে চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ তালিবানের কট্টর ইসলামি শাসনের প্রত্যাবর্তন যে ঘটছে সেটিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালিবান।
এটি আফগানিস্তানের নারীদের ওপর তালিবানের আরোপিত সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা। নব্বইর দশকে তালিবান ক্ষমতায় থাকাকালে নারীদের ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা ও পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
দুই দশকের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালিবান। এরপর তালিবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এবার নারী অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে তারা। তবে তা হবে শরিয়াহ আইনের মধ্যে থেকে।
তবে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কর্মজীবী নারীদের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকতে বলা হয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করে তালিবান। তাদের মন্ত্রিসভায় কোনো নারী রাখা হয়নি। এর প্রতিবাদ জানিয়ে কাবুলসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন আফগান নারীরা। এ সময় নারীদের ওপর চড়াও হন তালিবান সদস্যরা।
তালিবানের অধীন নারীদের পড়ালেখা ও খেলাধুলার ওপরও খড়্গ নেমে এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর জারি করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। সম্প্রতি তালিবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আফগানিস্তানের ৪০০ রকম খেলার অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে এসব খেলায় নারীরা আদৌ অংশ নিতে পারবে কি না, সে সম্পর্কে কিছুই জানায়নি সংগঠনটি।
গত সপ্তাহে স্কুল খোলার ঘোষণা দেয় তালিবান। তবে শুধু ছেলেদের স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত দেয় তারা এবং স্কুলে শুধু পুরুষ শিক্ষকেরাই পাঠদান করবেন বলে ঘোষণায় বলা হয়। তালিবান বলছে, তারা মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে।
গত সপ্তাহে তালিবানের মুখপাত্র সাঈদ জাকরুল্লাহ হাশিমি আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে জানান, নারীরা মন্ত্রী হতে পারবেন না, তাদের কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া। তার এই বক্তব্যের ভিডিও ব্যাপকভাবে শেয়ার হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
তোলো নিউজকে তালিবান মুখপাত্র বলেন, ‘একজন নারী মন্ত্রী হতে পারেন না। এটা এমন যে, আপনি তার গলায় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিলেন, যার ভার সে বহন করতে পারে না। মন্ত্রিসভায় নারী থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের কাজ হওয়া উচিত সন্তান জন্ম দেওয়া। বিক্ষোভকারী নারীরা সব আফগান নারীর প্রতিনিধিত্ব করে না।’
এদিকে আফগানিস্তানের নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিয়েছে তালিবান। এ মন্ত্রণালয়কে ‘পাপ-পুণ্য প্রচার এবং অপরাধ প্রতিরোধ’ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বদল করছে তারা। একসময় এ মন্ত্রণালয় কট্টর ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করেছিল। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবান সরকারের আমলে এ দপ্তর ছিল।
এদিকে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। রোববার দেশটির সাবেক নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে বেশ কিছু নারী অধিকারকর্মী এই বিক্ষোভ করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাসিরা তাওয়ানা নামের এক নারী বলেন, নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় অবশ্যই পুনরায় চালু করতে হবে। নারীদের সরিয়ে দেওয়া মানে মানুষকেই সরিয়ে দেওয়া।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরেক নারী তারানুম সায়েদি বলেন, মেয়েদের বাড়িতে রেখে, তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাদের স্কুলে যেতে না দিয়ে আফগান নারীদের দমানো যাবে না।
এ প্রসঙ্গে তারানুম সায়েদি বলেন, ‘আফগানিস্তানের আজকের নারীরা ২৬ বছর আগের নারী নয়।’
তালিবানের আগের আমলে ‘পাপ-পুণ্য প্রচার এবং অপরাধ প্রতিরোধ’ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছিল। তখন এই মন্ত্রণালয় তালিবানের কট্টর ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করেছিল।
নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, গত মাসে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালিবানের হাতে যাওয়ার পর তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে মন্ত্রণালয়ে তাদের কাজে ফেরার চেষ্টা করেছেন। তারা মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছেন। কিন্তু তালেবান তাদের কাজে ফিরতে দেয়নি। তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে।
আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা নারীর অধিকার সুরক্ষা করবে। কিন্তু নারীর অধিকার সুরক্ষায় তালিবানের কাজের সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতির কোনো মিল এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৯
আপনার মতামত জানানঃ