সারা বিশ্বে আঘাত হানা কোভিড-১৯ মহামারির আড়ালে গত বছর নিহত হয়েছে ২২৭ জন পরিবেশ রক্ষাকারী। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে বন, পানি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় যারা কাজ করছেন, তাদের ওপর হামলা বেড়েছে। আর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিক থেকে রেকর্ড হয়েছে ২০২০ সালে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল উইটনেস। সারা বিশ্ব থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন সংস্থাটি। সেখানে দেখা যায়, পরিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে গড়ে প্রতি সপ্তাহে চারজন মানুষ খুন হয়েছে।
পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের রিপোর্ট জানাচ্ছে, সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ২২৭ জন পরিবেশকর্মী। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৬৮। গত বছরের (২০১৯) রিপোর্টে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০৭। এবার (২০২০) প্রায় আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবেশরক্ষকদের ওপর নৃশংসতার পরিমাণ। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪ জনের বেশি পরিবেশকর্মীর মৃত্যুকে আশঙ্কাজনক হিসাবেই দেখছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
গ্লোবাল উইটনেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনার শিকার হয়েছেন বনভূমি-রক্ষকরা। বৃক্ষচ্ছেদন, অবৈধ খনন, চোরাশিকার, পাচার, ঝুম চাষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছে অধিকাংশ পরিবেশকর্মীকে। বাকি ৩০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন নদী দূষণ, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিবাদীদের ওপর।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাদের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ হলেও ৩০ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ভূমিপুত্ররাই। এই ঘটনা যেন আরও বেশি করে প্রমাণ দিচ্ছে, বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যের ওপর অত্যাচার পরিবেশের পাশাপাশি বিপন্ন করে তুলছে বাস্তুতন্ত্র এবং প্রকৃতি-ঘেঁষা মানুষগুলোকে।
গ্লোবাল উইটনেস আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে ল্যাটিন আমেরিকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কম্বোডিয়ার। এ অঞ্চলে আদিবাসীদের জমি অথবা বন ও কোকা ক্ষেত রক্ষা করতে গিয়ে ৬৫ জন খুন হয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মেক্সিকো। যেখানে এক-তৃতীয়াংশ হত্যাকাণ্ড জড়িত বন উজাড়ের প্রতিবাদের সঙ্গে, এখানে নিহত হয়েছে ৩০ জন।
ল্যাটিন আমেরিকার বাইরে একমাত্র দেশ ফিলিপাইন যেখানে ১৫ জনের বেশি নিহত হয়েছে। এখানে খনিজ সংগ্রহ, কাঠকাটা ও বাঁধবিরোধী ঘটনায় ২৯ জন হামলার শিকার হয়ে মারা গেছেন। ২০২০ সালের আক্রমণের অর্ধেকের বেশি ঘটনা ঘটেছে এই তিনটি দেশে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এ মাত্রা এড়াতে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশের পক্ষে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তনের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। দাবানল, খরা, বন্যা ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল এক বিশেষ প্রতিবেদনেও এমন সতর্কবাণী দিয়েছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৫২৭
আপনার মতামত জানানঃ